কখনো টইটুম্বুর পানি, কখনো ফসলের সবুজ শোভা—চলনবিলে ঋতুভেদে বদলে যায় দৃশ্যপট। শীত এলেই এই বিল হয়ে ওঠে অতিথি পাখির স্বর্গভূমি। প্রতিবছরের মতো এবারও দেশের সর্ববৃহৎ এই বিলে নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখির আগমন শুরু হয়েছে। হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে খাবারের সন্ধানে ঝাঁকে ঝাঁকে নেমেছে তারা।
সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বরের শেষ দিকে বিলে পানি কমতে থাকে। এ সময় খাদ্যের খোঁজে চলনবিলে আসে বক, কানা বক, ইতালি, শর্লি, পিঁয়াজখেকো, ত্রিশূল, বাটুইলা, নারুলিয়া, লালস্বর, কাদাখোঁচা, ফেফি, ডাহুক, বালিহাঁস, পানকৌড়ি, শামকৈলসহ অসংখ্য প্রজাতির দেশি-বিদেশি পাখি। ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত এদের অবস্থান থাকে ফাঁকা মাঠ, উন্মুক্ত জলাশয় ও গাছপালায়। সাইবেরিয়াসহ শীতপ্রধান বিভিন্ন দেশ থেকেই আসে এসব অতিথি।
এ বছর চলনবিলে বেশি নজর কেড়েছে বালিহাঁস, বক ও রাতচোরা প্রজাতির পাখি। তবে সব আনন্দ ম্লান করে দিচ্ছে অসাধু শিকারিদের দৌরাত্ম্য। কোথাও জাল, কোথাও বিষটোপ বা ফাঁদ পেতে নির্বিচারে ধরা হচ্ছে পরিযায়ী ও দেশি পাখি। এতে হুমকির মুখে পড়ছে বিলে জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য।
চাটমোহর উপজেলার বিলচলন ইউনিয়নের বোঁথর গ্রামের বাসিন্দা এনামুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর বিলে প্রচুর ছোট মাছ আর পোকামাকড় মেলে। এগুলোর খোঁজে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আসে। এখন প্রায় সবখানেই তাদের দেখা যাচ্ছে।’
হান্ডিয়াল ইউনিয়নের বাঘলবাড়ি এলাকার ফজলুল হক জানান, বোরো মৌসুমে পোকামাকড় খেতে নেমে আসে প্রচুর পাখি। কিন্তু শিকারিরা বিলে জাল পেতে লাঠি হাতে পাখিগুলোকে তাড়িয়ে দেয়। ভয়ে পাখি জালে আটকা পড়ে, পরে সেগুলো খাঁচাবন্দী করে বাজারে বিক্রি করা হয়।
চাটমোহরের পরিবেশকর্মী ডা. এস এম আতিকুল আলম বলেন, ‘পাখি শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্যই বাড়ায় না, পোকামাকড় খেয়ে কৃষকেরও উপকার করে। আইন থাকলেও শিকার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেই। সচেতনতার অভাবে দেশি প্রজাতির অনেক পাখি বিলুপ্তির পথে। পরিযায়ী পাখিও ক্রমেই কমে যাচ্ছে।’
এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাসের চৌধুরী বলেন, ‘বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনের আওতায় আমরা শিগগিরই বিলে শিকারবিরোধী অভিযান পরিচালনা করব।’