রাজশাহীর বাঘায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়েছে। এতে অর্ধশতাধিক আহতের খবর পাওয়া গেছে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার উপজেলা পরিষদের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
আহতদের মধ্যে কয়েকজনের নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন—উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল, বাঘা পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আক্কাছ আলী, উপজেলার আড়ানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউর রহমান শফি, আব্দুল খালেক, জার্মান আলী।
এর মধ্যে গুরুতর আহত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল ও রফিকুল ইসলামকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) পাঠানো হয়েছে। ১৮–১৯ জনকে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ১০–১২ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাকিরা অন্য স্থান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়া পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেলে পথচারী উজ্জ্বল আহত হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে আজ শনিবার বাঘা পৌরসভার দুর্নীতি ও পৌরসভার মেয়র মো. আক্কাছ আলীর সীমাহীন দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে মানববন্ধন ডাকে আওয়ামী লীগ। অপর পক্ষ বাঘা উপজেলা সচেতন নাগরিকদের ব্যানারে সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কতিপয় ব্যক্তি দলিল লেখক সমিতির নামে ক্রেতার কাছে জোরপূর্বক অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দেয়।
একই সময় ওই পথ দিয়ে বাঘা উপজেলা সচেতন নাগরিকের ব্যানারে পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আক্কাছ আলী ও পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম মেরাজের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যাচ্ছিল। একই স্থানে উভয় পক্ষ মুখোমুখি হলে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তারা। পৌনে এক ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলাকালীন পুলিশ টিয়ারশসল ছুড়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। ঘটনার সময় বাঘা বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়।
এর আগে ১৯ জুন রাজশাহীর বাঘায় সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখক সমিতির নামে নানা অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবাদে বাঘা সর্বস্তরের মানববন্ধনে আয়োজন করে। সেই মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলু, বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাছ আলী, পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম মেরাজ।
পুলিশ জানায়, এমপি পক্ষ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লায়েব উদ্দীন পৌর মেয়র আক্কাছ আলী গ্রুপের মধ্যে পূর্ব বিরোধের জের ধরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে আড়ানী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মানববন্ধন কর্মসূচিতে যোগ দিতে বাঘা পৌর এলাকার কাছে পৌঁছালে আমার ওপর হামলা করে এবং মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে।’
উপজেলার পাকুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম মেরাজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাঘা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কতিপয় ব্যক্তি দলিল লেখক সমিতির নামে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছে জোর পূর্বক অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রতিবাদে সচেতন নাগরিকের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। সহমত পোষণ করে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে।’ এর আগে কর্মসূচি থেকে উসকানিমূলক বক্তব্যে দিয়েছে বলে দাবি করেছেন মেরাজ।
বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান, কত রাউন্ড টিয়ারশেল ছোড়া হয়েছে, সেই হিসাব পরে জানানো যাবে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে ঘটনার পর এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।