হোম > সারা দেশ > রাজশাহী

চাঁদা দাবির অভিযোগে কৃষকদের রোষানলে যুবদল নেতা, গাড়ি ভাঙচুর

শাজাহানপুর(বগুড়া) প্রতিনিধি

বিক্ষুদ্ধ কৃষকেরা ‘চাঁদা’ নিতে আসা ব্যক্তিদের গাড়ি ঘিরে ধরেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

বগুড়ার শাজাহানপুরে চাঁদাবাজির অভিযোগে সাবেক যুবদল নেতা ও তাঁর লোকজনের ওপর চড়াও হয়েছেন কৃষকেরা। এ সময় গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। আহত হয়েছেন চারজন। গতকাল শুক্রবার রাতে উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের মানিকদ্বীপা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে ওই ৪ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়।

উদ্ধার ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার বামুনিয়া মণ্ডলপাড়া গ্রামের আব্দুল মতিনের ছেলে শাহাদত হোসেন (৪০), একই এলাকার তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে শহিদুল ইলাম (৪৫), কাটাবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে ওয়াহিদ কুরাইশি মুরাদ (৪৫) ও বামুনিয়া তালপুকুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন (৩০)।

তাঁদের মধ্যে শাহাদত হোসেন নিজেকে সাবেক যুবদল নেতা বলে পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বেই কৃষকদের কাছে খাজনা চাইতে গেলে এ ঘটনা ঘটে। তবে কৃষকদের অভিযোগ, খাজনা নয়, তাঁরা চাঁদা দাবি করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে মানিকদ্বীপাসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের আলুচাষিরা চারটি ট্রাকে আলু ঢাকার কারওয়ান বাজারে বিক্রির জন্য পাঠাচ্ছিলেন। এ সময় শাহাদত ও তাঁর লোকজন সেখানে গিয়ে বস্তাপ্রতি ১৫ টাকা করে দাবি করেন। আলুচাষিরা টাকা দিতে অস্বীকার করার পরেও টাকার জন্য চাপ দিলে চাষিরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

শাহাদাত হোসেন বিএডিসির একজন আলুবীজ ডিলার ব্যবসায়ী। তিনি বগুড়া জেলা আলু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি। সম্প্রতি একটি হিমাগারও চালু করেছেন তিনি। সিন্ডিকেট করে কৃষকদের কাছ থেকে ৪০ কেজির প্রতি বস্তা আলুবীজের দাম ৭ হাজার টাকা রাখার অভিযোগও আছে তাঁর বিরুদ্ধে। গত দুই মাস আগে উপজেলার হাট–বাজার ইজারায় আড়িয়া ইউনিয়নের নয়মাইল হাট পান শাহাদাত হোসেন। খাস আদায়ের জন্য ২২ এপ্রিল উপজেলা পরিষদে উন্মুক্ত হাট–বাজার ডাকে আড়িয়া বাজারসহ চারটি হাট–বাজার পান শাহাদাত হোসেন। এ দিন হাট–বাজার সীমানা এলাকা থেকেও প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে গ্রামে এসে বস্তাপ্রতি ১৫ টাকা দাবি করায় ক্ষিপ্ত হন কৃষকেরা।

এদিকে উদ্ধারের পর গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে শাহাদাত হোসেন অভিযোগ করে বলেছেন, স্থানীয় জামায়াতে ইসলামী ও আওয়ামী লীগের লোকজন এই হামলা করেছে।

বিক্ষুদ্ধ কৃষকেরা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শাহাদাত হোসেন বিএডিসির একজন আলুবীজ ডিলার। সম্প্রতি সিন্ডিকেট করে সরকার নির্ধারিত দাম না নিয়ে ৪০ কেজির প্রতি বস্তা আলু আমাদের কাছে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। এবারে আমরা আলু চাষ করে লোকসানে আছি। প্রতি কেজি আলু বিক্রি করছি সর্বোচ্চ ৮ টাকায়।’

কৃষকেরা বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যায় চারটি ট্রাকে আলুবোঝাই করে ঢাকার কারওয়ান বাজারে নিয়ে যাচ্ছিলাম। এ সময় কালো রঙের একটি ব্যক্তিগত গাড়িতে শাহাদাত আসেন। সঙ্গে মোটরসাইকেলের বহর। মানিকদ্বীপা গ্রামের সোনালী বাজার নামের এলাকায় আলুবোঝাই ট্রাক আটকে বস্তাপ্রতি ১৫ টাকা করে চাঁদা দাবি করেন। আলুর দাম ৮ টাকা কেজি। এর মধ্যে পরিবহন খরচ আছে ও কারওয়ান বাজারে খাজনা দিতেই হবে। হাট–বাজার এলাকার বাইরে হওয়ার পরেও এখানে আবার খাজনা দিলে কৃষকের পকেটে কোনো টাকাই থাকে না।’

কৃষকরা আরও বলেন, শাহাদাত সহযোগীদের নিয়ে আলুর ট্রাক আটকে দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে কয়েক গ্রামের হাজারো কৃষক মুহূর্তে সমবেত হয়ে তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ি আটকে দেন। তিন সহযোগীসহ শাহাদাত সে সময় গাড়ির ভেতরে অবস্থান নেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ কৃষকেরা প্রথম দফায় গাড়ির কিছু অংশ ভাঙচুর করেন।

বিক্ষুব্ধ কৃষকেরা বলেন, ‘পরে আমরা শাহাদাতকে বলি ইউএনওকে ফোন দিয়ে ডেকে নিয়ে এসে সমাধান দিয়ে যান। রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ইউএনও ঘটনাস্থলে আসেননি। পুলিশ এসে শাহাদাতকে উদ্ধার করে নিয়ে যেতে চাইলে বিক্ষুব্ধ কৃষকেরা পুলিশের সামনেই গাড়ি আরেকবার ভাঙচুর করেন। পরে থানা থেকে আরও পুলিশ এসে ওই চারজনকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। রাত পৌনে ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ এসে গাড়িটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়।’

শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমি হাটের একজন ইজারাদার। সরকারকে টাকা দিয়ে হাট নিয়েছি। ৫ আগস্টের পর থেকেই মানিকদ্বীপা গ্রামের কৃষকেরা হাটের খাজনা দেন না। কয়েক দিন ধরে কৃষকেরা আলু নিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি এসে খাজনা চেয়েছিলাম। এতে কৃষকেরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘কৃষকেরা যদি খাজনা না দেন, তবে আমি সরকারের কাছে হাট ফিরিয়ে দিয়ে আমার টাকা ফেরত চাইব। বাজারের সামনে লাইট বন্ধ করে আমার গাড়ি ভাঙচুর করেছে। আমি আড়িয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সহসভাপতি। বিএনপির লোক ব্যবসা করবে, তাই আমার ওপরে জামায়াতে ইসলাম ও আওয়ামী লীগের কিছু লোকজন হামলা করেছে।’

বিক্ষুদ্ধ কৃষকেরা ‘চাঁদা’ নিতে আসা ব্যক্তিদের গাড়ি ঘিরে ধরেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

জানতে চাইলে শাজাহানপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এনামুল হক শাহীন বলেন, ‘শাহাদাতকে আমি ব্যবসায়ী হিসেবে চিনি। বিএনপি রাজনীতিতে আমি তাঁকে দেখি নাই। কৃষকদের ওপরে চাঁদাবাজির ঘটনায় দলীয় নেতা–কর্মীদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শাজাহানপুর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা আব্দুর রহমান বলেন, ‘মানিকদ্বীপা গ্রামে হাটের ইজারাসংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল বলে শুনেছি। সেখানে রাজনৈতিক কোনো বিষয় নেই। জামায়াতের কোনো লোক হাট–বাজার ডাকে নাই।’

শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াদুদ আলম বলেন, ‘ইজারার বিষয়টি আমি জানি না। এটা ইউএনও বলতে পারবেন। আমাদের ওপরে কেউ চড়াও হয়নি। কোনো পক্ষই মামলা করেনি। পরে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জানতে চাইলে শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাইফুর রহমান বলেন, ‘অতীত সরকার আমলে যাই হয়ে থাকুক, বর্তমানে হাটের সীমানার বাইর থেকে খাজনা আদায় করা যাবে না। এ ঘটনায় কোনো দায় উপজেলা প্রশাসন নেবে না। প্রয়োজনে আমরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েবের সঙ্গে আলোচনা করে খাজনা আদায়ের লোক পরিবর্তন করতে পারি। হাট এলাকার বাইরে খাজনা আদায়ের নামে চাঁদাবাজি করতে চাইলে কৃষকেরা থানায় চাঁদার অভিযোগে মামলা করতে পারবেন।’

সিরাজগঞ্জে অডিটরিয়ামের ওয়াশরুম থেকে বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার

জয়পুরহাটে ট্রাক–ভ্যান সংঘর্ষে নিহত ১

সাজিদের মৃত্যুতে রাষ্ট্রের কাছে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি

দুর্গাপুরে বধ্যভূমিতে শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা ও মোনাজাত

রাকসুর জিএসকে ‘হত্যার হুমকি’ দিয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার ফেসবুক পোস্ট

বগুড়ায় ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে চালক নিহত, আহত তিন

গভীর নলকূপ খনন: বরেন্দ্রজুড়ে শত শত মৃত্যুকূপ

শিশু সাজিদের শেষ বিদায়ে হাজারো মানুষের ঢল

আমার একটা কলিজা হারায় ফেলছি, বিচার চাই: সাজিদের বাবা

প্রাথমিকে শতভাগ বই, মাধ্যমিকে এল অর্ধেক