ছেলে ভালো, তাই প্রবাসী রুবেল হোসাইনের সঙ্গে মোবাইলে ভিডিও কলে মরিয়ম খাতুনের বিয়ে দিয়েছিল পরিবার। এরপর আসি আসি করেও ছুটি না পেয়ে রুবেলের বাড়ি আসা হয়নি। নববধূর মুখও সামনাসামনি দেখা হয়নি। দীর্ঘদিন পর রুবেল সৌদি আরব থেকে ফিরলেন বটে, তবে লাশ হয়ে। আজ বুধবার দুপুরে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বাড়ইপাড়া গ্রামে রুবেলের কফিনবন্দী লাশ আনা হয়।
গত ১৪ জুলাই সৌদির দাম্মামের হুফুফ শহরে একটি সোফা কারখানা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৯ জন নিহত হন। এর মধ্যে বাংলাদেশি সাতজন, যাঁদের চারজনের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বারইপাড়া ও বড় মাধাইমুড়ি গ্রামে। আজ বুধবার দুই গ্রামের চারজনেরই লাশ এসেছে। এ সময় গ্রাম দুটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
নিহত চার শ্রমিক হলেন বারইপাড়া গ্রামের জফির উদ্দিনের ছেলে রুবেল হোসাইন, একই গ্রামের মো. জমিরের ছেলে মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম, সাজেদুলের ভাতিজা আরিফ হোসেন রুবেল ও বড় মাধাইমুরি গ্রামের আনিসুর রহমান সরদারের ছেলে ফিরুজ আলী সরদার।
স্ত্রীর মুখ না দেখা রুবেল পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা আনতে সৌদি যান ছয় বছর আগে। স্বামীর লাশ আসার পর কখনো কাঁদছিলেন, কখনো শোকে পাথর হয়ে যাচ্ছিলেন কলেজছাত্রী মরিয়ম।
মরিয়ম বলেন, মারা যাওয়ার আগের রাতেও রুবেলের সঙ্গে কথা হয় তাঁর। দেশে আসার জন্য শুক্রবার কাগজপত্র জমা দিয়ে কারখানায় যাবেন বলে জানিয়েছিলেন রুবেল। শুক্রবার (১৪ জুলাই) রাতে আবার কথা বলবেন জানিয়েছিলেন। তাই রাতে ফোনও দিয়েছিলেন মরিয়ম। রাত ৯টা পর্যন্ত ফোন বেজেছে, কেউ ফোন ধরেনি। এরপর ফোন আর বাজেনি। পরের দিন সকাল ৮টার দিকে রুবেলের প্রবাসী বড় ভাই ফোন করে জানান, রুবেল মারা গেছেন।
তিন ভাইয়ের মধ্যে রুবেল সবার ছোট ছিলেন। স্থানীয় দালালকে ১৬ কাঠা জমি লিখে দেওয়া ছাড়াও দেড় লাখ টাকা নগদ দিয়ে ২০১৬ সালে সৌদি আরব পাড়ি জমান রুবেল। তাঁর বড় দুই ভাই আগে থেকেই প্রবাসী। বড় ভাই সৌদি আরব এবং মেজ ভাই দুবাই থাকেন।
বারইপাড়া গ্রামের শাহাদাত হোসাইনের একমাত্র ছেলে আরিফ হোসেন রুবেল সৌদি আরব যান আট মাস আগে। ফিরুজও যান আট মাস আগে। আর আগে থেকেই সৌদিতে থাকা চাচা সাজেদুল নিয়ে গিয়েছিলেন আরিফকেও। কাজের ব্যবস্থা করেছিলেন একই কারখানায়।
আজ বুধবার সকালে প্রথমে ঢাকা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে আনা হয় সাজেদুল ও আরিফের লাশ। সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা তাঁরা। এরপর আসে রুবেল ও ফিরুজের লাশ। তাঁদের হারিয়ে পাগলপ্রায় স্বজনেরা। এলাকাবাসীও ভিড় জমায় একনজর লাশ দেখতে। পরে একে একে সবার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এফ এম আবু সুফিয়ান আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল মঙ্গলবার রাতে চারজনের লাশ ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁদের লাশ নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। সরকারি উদ্যোগে চারজনের লাশ আনা হয়েছে।