নাটোর পৌরসভার সরবরাহ করা (সাপ্লাই) পানিতে পানিবাহিত কোনো রোগের জীবাণু পাওয়া যায়নি। জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের বগুড়া জোনাল ল্যাবে পানির নমুনা পরীক্ষা শেষে এ তথ্য জানিয়েছে সরকারি দপ্তরটি। এ পানি পানের পরই নাটোর পৌরসভার একটি ওয়ার্ডের দুই শতাধিক মানুষ হঠাৎ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এ ঘটনার জন্য গৃহস্থালির সংযুক্ত পাইপলাইনকে দায়ী করছে নাটোর পৌর কর্তৃপক্ষ।
আজ বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বগুড়া জোনাল ল্যাবে পানির নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন প্রকাশ করে নাটোর জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবারও নতুন করে শতাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আজ দুপুর পর্যন্ত নাটোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ২৬০ জন রোগী। এর আগে গতকাল বুধবার ভর্তি ছিল ১৪৭ জন।
এর আগে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর নাটোর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের ঝাউতলা এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়ির প্রায় ৩০ জন বাসিন্দার কেউ কেউ হঠাৎ ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা ও বমি ভাব অনুভব করে। প্রাথমিক অবস্থায় তারা স্যালাইন, পেটব্যথা কমানোর সহজপ্রাপ্য ওষুধসহ বেশ কয়েক ধরনের ওষুধ সেবন করে। কিন্ত তাতে কাজ না হওয়ায় মধ্যরাত থেকে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হতে শুরু করে। এরপর সকাল থেকে একই ওয়ার্ডের কাঁঠালবাড়ি, ঘোড়াগাছা ও ডোমপাড়া এলাকার শতাধিক মানুষ একই সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। গতকাল জেলা সদর হাসপাতালে ওই ওয়ার্ডের মোট ১৪৭ জন পেটের অসুখের রোগী জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয় বলে জানা যায়। তাদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৫৫ নারী ও ২৬টি শিশু ছিল।
রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, মঙ্গলবার বিকেলের পর পৌরসভার সরবরাহ পানি পানের পর তারা হঠাৎ পেটে ব্যথা অনুভব করে। এর পর থেকে ডায়রিয়া, শরীরের রগ ও পেশিতে টানসহ বিভিন্ন সমস্যা অনুভব করতে থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল নাটোর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের ঝাউতলা পাম্পসংলগ্ন এলাকা, পটুয়াপাড়া গুচ্ছগ্রামসংলগ্ন এলাকা ও ঝাউতলা বস্তি এলাকা থেকে পৌরসভার সাপ্লাই লাইনের পানির নমুনা সংগ্রহ করে নাটোর পৌরসভা ও নাটোর জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এ তিন এলাকা থেকে বেশি রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। সংগৃহীত নমুনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বগুড়া জোনাল ল্যাবের সিনিয়র কেমিস্ট বরাবর পাঠায় নাটোর পৌরসভা। বগুড়া ল্যাবে পানিতে ফেকাল কলিফর্মের মাত্রা পরীক্ষা করেন জুনিয়র কেমিস্ট আলাউদ্দিন আল ফারুক ও স্যাম্পল এনালাইজার হাফিজুর রহমান। নমুনা পানিতে এই উপাদানের মাত্রা শূন্য পাওয়া গেছে।
বগুড়া জোনাল ল্যাবের সিনিয়র কেমিস্ট আব্দুল জব্বার জানান, ফেকাল কলিফর্ম হলো একধরনের কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া, যা মানুষ ও উষ্ণ রক্তের প্রাণীর মলে পাওয়া যায় এবং এটি মলদূষণের একটি সূচক হিসেবে কাজ করে। ল্যাবে পরীক্ষিত নমুনার এ ধরনের কিছু পাওয়া যায়নি।
নাটোর পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল হক বলেন, ‘পৌরসভার সাপ্লাই পানিতে কোনো দূষণ বা জীবাণু না থাকার বিষয়টি আমরা আগেই বলেছিলাম। তারপরও পৌরবাসীর স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করে পানির নমুনা পাঠানো হয় এবং পানি দূষণমুক্ত হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে। আমরা ধারণা করছি, পৌরসভার সাপ্লাই লাইনের শেষপ্রান্ত থেকে যে সার্ভিস লাইন গৃহস্থালি বাসাবাড়ি পর্যন্ত টেনে নেওয়া হয়েছে, সেই লাইন ত্রুটিপূর্ণ। আমরা পৌরসভার সমস্ত লাইন ও বাই লাইনগুলো ইতিমধ্যে পরীক্ষা করেছি, যেখানে কোনো ত্রুটি বা লিকেজ পাইনি।’
নাটোর জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল কবীর ভূঁইয়া বলেন, ‘পৌরসভার আক্রান্ত ওয়ার্ডটিতে ইতিমধ্যে ২০ হাজার পিস পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। আরও ৪০ হাজার পিস ট্যাবলেট মজুত আছে। আশা করছি, কোনো সংকট হবে না।’
জেলা সিভিল সার্জন মুক্তাদির আরেফিন বলন, ‘পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য আজ সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে আইসিডিডিআরবির একটি প্রতিনিধিদলের নাটোরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। রোগীদের যথাযথ সেবা দিতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’