ময়মনসিংহে নগরীর তিনকোনা পুকুরপাড় এলাকায় রেলওয়ের চার শতাংশ জমি দখল করে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ কর্মী মার্কেট নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মুসা মিয়া নামের ওই ব্যক্তি বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় ৪৬ দিন জেল খেটে গত ৭ অক্টোবর জামিনে বের হন। তাঁর ওই মার্কেট নির্মাণ নিয়ে এলাকায় হট্টগোল ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
গত বুধবার মার্কেট নির্মাণ নিয়ে মুসা মিয়ার সঙ্গে এলাকাবাসীর বাগ্বিতণ্ডা ও উত্তেজনার সৃষ্টি হলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। এ সময় অবৈধভাবে গড়ে তোলা মার্কেট ভেঙে ফেলারও নির্দেশ দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
মুসা মিয়ার দাবি, তাঁর বাবার কেনা জমির চার শতাংশের ওপর মার্কেট নির্মাণ করছেন। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, নির্মাণাধীন মার্কেটটি পুরোপুরি রেলের জমির মধ্যে পড়েছে। ওই ব্যক্তির বাড়িরও কিছু অংশ রেলের জমিতে পড়তে পারে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মুসা মিয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রভাব খাঁটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়ের জমি ভোগদখল করে আসছেন।
জানা গেছে, অভিযুক্ত মুসা মিয়া ময়মনসিংহ নগরীর তিনকোনা পুকুরপাড়ের বাসিন্দা। তিনি গত ৭ অক্টোবর বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি মামলায় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান। এরপর তিনি বাড়িসংলগ্ন রেললাইনের পাশে আধা পাকা মার্কেট নির্মাণের কাজ শুরু করেন। মার্কেটে ১২টি দোকানঘর তৈরি করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভাড়া বাবদ জামানত নিয়েছেন। বুধবার মার্কেট নির্মাণকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসী ও মুসা মিয়ার মধ্যে হট্টগোল বাধে। খবর পেয়ে পুলিশ ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সেখানে যায়। জমি মেপে মার্কেটটি রেলওয়ে জমির মধ্যে হওয়ায় তা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত মার্কেটটি ভাঙা হয়নি। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
তিনকোনা পুকুরপাড়ের বাসিন্দা ইমন হাসান বলেন, এই এলাকায় রেললাইনের এক পাশে ৪৬ ফুট এবং অন্য পাশে ১৮ ফুট করে রেলের জায়গা রয়েছে। যে পাশে ১৮ ফুট করে রেলের জায়গা, সেই পাশে রেললাইন থেকে পাঁচ ফুট দূরত্ব ফাঁকা রেখে মুসা মিয়া মার্কেট নির্মাণ করেছেন; যা পুরোটাই অবৈধ।
ব্যবসায়ী মো. রোকন বলেন, ‘মুসা মিয়ার বাসা ঘিরে রেললাইন। তাই ৮-১০ বছর আগে আমার বাবা তাঁকে এককালীন ৫০ হাজার টাকা দিয়ে মাসিক ভাড়া চুক্তিতে রেলের জায়গায় একটি দোকান ভাড়া নেন।’
অভিযোগের বিষয়ে মুসা মিয়া বলেন, ‘আমার বাবা ১৯৬৫ সালে রেলের পাশের ১৪ শতাংশ জমি কিনেছিলেন। ১০ শতাংশ জায়গার মধ্যে আমি বাড়িঘর করেছি। বাকি ৪ শতাংশের মার্কেট নির্মাণ করছি। আমার বড় ভাই আমার বিপক্ষে চলে গিয়ে আমাকে নানাভাবে হয়রানি করছেন। আমি আওয়ামী লীগ সমর্থন করলেও কোথাও নাম-পদবি নেই।’
কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, রেলের পাশের জমি নিয়ে মুসা মিয়া ও এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হলে সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবে–প্রকৃত পক্ষে জায়গার মালিক কে।
রেলওয়ের ময়মনসিংহ অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হাসান বলেন, মাপজোক করে মার্কেটটি রেলওয়ের জমির মধ্যে হওয়ায় তা ভেঙে ফেলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্মাণাধীন মার্কেটটি পুরোপুরি রেলের জমিতে পড়েছে। ওই ব্যক্তির বাড়ির কিছু অংশও রেলের জমিতে পড়তে পারে। তাই আগে মার্কেটটি ভাঙার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।