রাজধানীতে শান্তি সমাবেশ শেষে গুলিস্থানে গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের দুই নেতার অনুসারীদের সংঘর্ষে নিহত পথচারী হাফেজ রেজাউলের পরিচয় পাওয়া গেছে। তার বাড়ি শেরপুরের নকলা উপজেলার চরঅষ্টাধর ইউনিয়নের নারায়ণখোলা পশ্চিমপাড়া গ্রামে। বাবা বর্গাচাষি আব্দুস সাত্তার। রেজাউল পরিবাবের বড় ছেলে। রেজাউল ঢাকার যাত্রাবাড়িতে একটি মাদ্রাসায় দাওরা হাদিস বিভাগের ছাত্র ছিলেন।
পরিবারের সদস্যরা গতকাল শনিবার সকালে রেজাউলের মৃত্যুর খবর পান। নকলা থানা-পুলিশ রেজাউলের জেঠা আজাহারুল ইসলামের মুঠোফোনে খুদেবার্তা পাঠিয়ে তাঁর মৃত্যুর খবর দেন এবং ঢাকায় গিয়ে লাশ গ্রহণ করে নিজ বাড়িতে আনার অনুরোধ করেন। হঠাৎ ছেলের মৃত্যুর খবরে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন রেজাউলের বাবা-মা। এদিকে তিন দিনেও রেজাউলের লাশ না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী।
পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একেবারেই নম্র-ভদ্র সদালাপী রেজাউল কোনোদিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। তার তিন বোন আছে। ময়মনসিংহ জামিয়া ফয়জুর রহমান মাদ্রাসা থেকে পড়াশো শেষ করে তিনি ঢাকায় একটি মাদ্রাসায় দাওরা হাদিস বিভাগে ভর্তি হন।
আজ রোববার দুপুরে নিহত রেজাউলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা মৃগী নদীর পাড় ঘেঁষে নিহত রেজাউলের বাড়ি। বাড়ির পূর্বে রয়েছে নারায়নখোলা পশ্চিম আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। আশেপাশে আর কোনো বাড়ি-ঘর নেই। বাড়ির দক্ষিণে বাঁশঝাড়ের নিচে পারিবারিক কবরস্থানে রেজাউলের জন্য কবর খোঁড়া হয়েছে। তাঁর পাশে কবরের জন্য চাঁটাই তৈরি করছেন এক ব্যক্তি।
প্রতিবেশী ও আত্মীয় বন্দেজ আলী বলেন, সবসময় হাসিখুশি রেজাউল কোনো সাতে-পাঁচে ছিলেন না। তার ছোট ভাইও একজন হাফেজ। রাজনীতি করতেন না। রোজার মাসে স্থানীয় মসজিদে খতম তারাবি পড়ান। এই ছেলে তো বিনা কারণে মারা গেলো। প্রশাসনের কোনো লোক বা কোনো জনপ্রতিনিধি কেউ তো কোনো খোঁজ নিলো না।
চরঅষ্টাধর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রাব্বানী আজকের পত্রিকাকে বলেন, রেজাউল অত্যন্ত ভদ্র ও ধার্মিক ছেলে ছিল। তাঁর বাবা অনেক কষ্ট করে তাঁকে পড়াশোনা করাচ্ছিল। রেজাউল রাজনীতি করতো না। রেজাউলের এমন মৃত্যুর ঘটনা মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর।