কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার ওসি মো. মনোয়ার হোসেনকে প্রত্যাহারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ–মিছিল ও থানা ঘেরাও করেছেন স্থানীয় লোকজন। আজ বুধবার দুপুরে এ কর্মসূচিতে কয়েক শ মানুষ অংশ নেন। ইটনার বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার ব্যানারে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হলেও এতে উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীদের অংশগ্রহণ ছিল বেশি।
আয়োজকদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ ও এর দোসরদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও ষড়যন্ত্রে ওসিকে ফাঁসানো হয়েছে। তাঁরা বলছেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগ করা কথিত এক সমন্বয়কের ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পিত ফোনালাপের অডিও ফেসবুকে ফাঁস করে জনবান্ধব ওসিকে বদলি করা হয়। তাঁকে দ্রুত পুনর্বহাল করতে হবে।
দুপুরে ইটনা মধ্য বাজার থেকে বিক্ষোভ–মিছিলটি শুরু হয়। পরে থানা ঘেরাও করেন নেতা–কর্মীরা। সেখানে আধা ঘণ্টা ঘেরাও কর্মসূচি চলে। পরে মিছিলকারীরা উপজেলা পরিষদের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন। বেলা ২টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনে সমাবেশ হয়। সেখানে বক্তব্য দেন ইটনা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস এম কামাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুজ্জামান ঠাকুর স্বপন, জয়সিদ্ধি ইউপি চেয়ারম্যান মনির উদ্দিন, ইটনা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক পলাশ রহমান ও উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আজাদুর রহমান সুমন।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, ১২৮ বস্তা ভিজিএফের চাল উদ্ধারের ঘটনায় গত ২০ মার্চ রাতে ইটনা উপজেলার বাদলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আদিলুজ্জামান ভূঁইয়াকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাঁর এই গ্রেপ্তারের পর আওয়ামী দোসরেরা ইটনা থানার ওসি মো. মনোয়ার হোসেনকে সরাতে নানাভাবে তৎপর হয়ে ওঠে। এই তৎপরতার অংশ হিসেবে সমন্বয়ক দাবিদার আফজাল হোসেন শান্ত নিজে থেকে ওসি মনোয়ার হোসেনকে ফোন করে কলরেকর্ড ফাঁসের নাটক সাজান।
আফজাল হোসেন শান্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইটনা উপজেলার স্থগিত করা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক। বিএনপির নেত—কর্মীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কলরেকর্ডটা যদি সাজানো নাটক হয়, তাহলে আমি আরেকটা কলরেকর্ড আপনাকে পাঠাবোনে। আমি শান্ত তো, বুঝতে পারছেন কী জিনিস? যদি সাজানো নাটক হইত, তাহলে আমি ৫ লাখ টাকার মামলা সাজাইতাম। জিলাপি খাওয়ার কাহিনি সাজাইতাম না। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, উনাদের বলেন উনারা সবাই মিলে শান্তর বিরুদ্ধে একটা কলরেকর্ড বানাইতে। উনারা তো ওসির কাছ থেকে সুবিধা নিতেন। আপনি ইটনাতে একটু ভিজিট করেন না, মানুষ ঈদ উল্লাস করতেছে। আমি এত বড় রিস্ক কেন নিলাম, নিছি মানুষের উপকার হবে।’
ইটনা থানার ওসি মো. জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি আজ যোগদান করেছি। তারপর উপজেলায় মিটিং করলাম। তাঁরা মিছিল করেছে। মিছিলটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। থানা ঘেরাওটেরাও হয় নাই ভাই।’
এদিকে বদলি হওয়া ওসি মনোয়ার হোসেন তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে আজ দুপুরে একটি পোস্ট করেন। তাতে তিনি লেখেন, ‘দয়া করে কোন বিক্ষোভ বা কোন সমাবেশ করবেন না। যে অভিযোগে আমাকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছে সে বিষয়ে তদন্তের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করে আমাকে শুধু বদলি নয় বরং বরখাস্ত করলে আমি খুশি হতাম। কেননা এতে বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন থাকত। যাইহোক আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ পুলিশ তথা রাষ্ট্র একদিন না একদিন এ বিষয়ে অবশ্যই তদন্ত করবে। ততদিন পর্যন্ত আপনারা ধৈর্য ধরুন নয়তো অশুভ চক্র নতুন করে আবার আমাকে বিপদে ফেলবে। সবাই ভালো থাকুন।...আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে-এই বাংলায় হয়তো মানুষ নয়-হয়তোবা শঙ্খচিল শালিকের বেশে।’
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, ‘আমি জেনেছি উনারা মিছিল করেছেন। থানা ঘেরাও কেন হলো, বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।’