খুলনায় অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের সময় পুলিশের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৮-১০ জন আহত হয়েছেন। আজ রোববার সকাল থেকে নগরীর বয়রা বাস্তহারা এলাকার মুক্তিযোদ্ধা কলোনিতে এ ঘটনা ঘটে। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার সময় এলাকাবাসী সড়ক বিভাগের একটি বুলডোজার ভাঙচুর করেন। এ সময় পুলিশ বস্তিবাসীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা ও কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ নগরীর বয়রা বাস্তহারা এলাকার মুক্তিযোদ্ধা কলোনির অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে গেলে কলোনির বাসিন্দারা বাধা দেন। একপর্যায়ে কলোনির বাসিন্দারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। পুলিশ পাল্টা লাঠিপেটা করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বাস্তহারা সড়ক ব্যারিকেড দিয়ে টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে তাঁরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। দুই পক্ষের ঘণ্টাব্যাপী পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিপেটায় পুলিশসহ উভয় পক্ষের ৮-১০ জন আহত হন।
বিলকিস বেগম (৪৫) নামের বাস্তুহারা কলোনির এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে বসবাস করে আসছি। আমাদের উচ্ছেদ করা হলে আমরা কোথায় যাব। আমরা জীবন থাকতে এখান থেকে কোথাও যাব না।’
বাস্তুহারা কলোনির আরও এক বাসিন্দা সরকারি ব্রজলাল কলেজের ছাত্র রাসেল হাওলাদার বলেন, ‘আগে থেকে আমাদের কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। হঠাৎ করে পুলিশ এসে জোর করে আমাদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা করে। পুনর্বাসন না করে আমাদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা করা সম্পূর্ণ অমানবিক।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বয়রা বাস্তুহারা দুই একর জায়গায় প্রায় ২০০ পরিবার বসবাস করে। তবে ১৯৮৭ সালে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ জায়গাটি লটারির মাধ্যমে প্লট আকারে বিক্রি করে। ৩৫ বছর পার হলেও এখনো জায়গা বুঝে পাননি সেখানকার ৪২ প্লটমালিক।
নগরীর খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর আতাহার আলী বলেন, ‘জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আমরা উচ্ছেদ কার্যক্রমে সহযোগিতার জন্য গিয়েছিলাম। এ সময় অবৈধ বস্তিবাসীদের সরাতে গেলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তারা আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। তাদের হামলায় আমিসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়।’
এ ব্যাপারে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) রাশিদুল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষের ঘটনার পর গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত করেছে। এ ঘটনায় পুলিশ সদস্যসহ ৮-১০ জন সামান্য আহত হয়েছেন। পুলিশ বাস্তহারা স্থান থেকে সরে গেছে। বর্তমানে অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। এ ঘটনায় মামলা করা হবে।