‘আমি বাবাকে শেষবারের মতন ছুঁয়ে দেখতে চাই। কতটা কষ্ট পেয়েছে, বাবাকে দেখে একটু বুঝতে চাই। একজন মানুষকে কী করে এমনভাবে মারতে পারে! এভাবে বাবাকে কেটে কেটে টুকরো করা হয়েছে, জীবনেও ভুলতে পারব না।’ আজ শুক্রবার দুপুরে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে নিজেদের বাসার সামনে সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন সাংবাদিকদের এসব কথা বলেছেন।
মুমতারিন ফেরদৌস বলেন, ‘ওপরে যদি আল্লাহ থাকে, তাহলে আমার বিশ্বাস তিনি বিচার করবেন। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য অনেক দিন ধরেই তাঁরা পরিকল্পনা করেছেন। তাঁরা সাজিয়ে-গুছিয়ে নিয়েই এই ধরনের বড় একটা অপরাধ ঘটিয়েছেন। সুষ্ঠু তদন্ত করেন, কারা আছেন এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে।’
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যাদের নাম এসেছে, তাঁদের বিদেশ থেকে নিয়ে আসার কথা জানান এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস। তিনি বলেন, ‘কান টানলে মাথা আসবে। যদি তাঁদের ওপরেও কেউ থেকে থাকেন, তাঁর নামটিও খতিয়ে দেখেন। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তদন্ত করে বিষয়টি দেখেন। রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক যেটাই হোক না কেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখেন।’
মুমতারিন ফেরদৌস বলেন, ‘আমি বাবাকে শেষবারের মতন ছুঁয়ে দেখতে চাই। বাবা কতটা কষ্ট পেয়েছে তাঁকে দেখে একটু বুঝতে চাই। একজন মানুষ মানুষকে এমনভাবে কী করে মারতে পারে? ইসলামে আছে, মৃতদেহকে আস্তে আস্তে গোসল করাও, আস্তে আস্তে কাপড় পরাও, যেন ব্যথা না পায়। আর এভাবে আমার বাবাকে কেটে কেটে টুকরো করা হয়েছে, জীবনেও ভুলতে পারব না।’
‘কালীগঞ্জে আমার বাবার জনপ্রিয়তা দেখে আটকানোর জন্য একসময় তাঁর নামে মিথ্যা মামলা ও অপপ্রচার করা হয়। পরে এসব মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এর প্রমাণও আমাদের কাছে আছে।’ এসব কথা বলেন এমপি আনারের মেয়ে।
মুমতারিন ফেরদৌস বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে ফোনে বলেছেন “ধৈর্য ধরতে হবে। ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে। ধৈর্য ধরো, আমি সঙ্গে আছি।” তিনি আমাকে বলেছেন, “তুমি তোমার বাবার সন্ধান চেয়েছিলে, স্পেশাল ফোর্স পাঠিয়ে আমি তোমার বাবাকে খুঁজে দিয়েছি। আমি আর কী করব বলো? আমি খুঁজে দিয়েছি, পুলিশ তদন্ত করছে, প্রতিবেদন এলে পদক্ষেপ নেব।’
গত ১২ মে এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার চিকিৎসার জন্য দর্শনার গেদে বন্দর দিয়ে ভারতের কলকাতায় যান। ২২ মে তাঁর মৃত্যুর বিষয় জানাজানি হয়। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে তাঁর মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন ঢাকা থেকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের বাড়িতে পৌঁছান। এ সময় আশপাশের এলাকা থেকে বিভিন্ন নেতা-কর্মীরা আনারের বাসার সামনে এসে উপস্থিত হন এবং মুমতারিন ফেরদৌসের সঙ্গে কথা বলেন।
এমপি আনারের বাল্যবন্ধু গোলাম রসুল বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানতে পেরে যা বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারছি। তাঁর খুনের পরিকল্পনা দুই-তিন মাস ধরে করেছে। তাঁকে সুকৌশলে ভারতে নিয়ে গিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। শাহীনকে ধরে এনে আইনের আওতায় আনলে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তৃণমূল পর্যন্ত কারা জড়িত আছে সবকিছু বের হয়ে আসবে।’
গোলাম রসুল আরও বলেন, ‘আজ শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে আনারের জন্য স্থানীয় প্রতিটি মসজিদে দোয়া মাহফিলের ব্যবস্থা করা হয়।’