সুন্দরবন এখন দস্যুমুক্ত। নির্ভয়ে ঘোরাফেরা করতে পারেন পর্যটকেরা। আক্রান্ত হওয়ার ভয় ছাড়াই নির্বিঘ্নে বনে যেতে পারেন বাওয়াল ও মৌয়ালেরা। ২০১৬ সালের ৩১ মে থেকে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর পর্যন্ত সুন্দরবনের ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন সদস্য আত্মসমর্পণের পর অনেকটা নিশ্চিন্ত থাকতে পারছেন বন কর্মকর্তারাও। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিতে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ও র্যাবের ব্যবস্থাপনায় ৪৬২টি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করেন তাঁরা।
সুন্দরবনকে অবলম্বন করে যাদের জীবন সেই জনপদের বাসিন্দাদের বয়ানে উঠে এসেছে সেই দিনগুলোর বর্ণনা। দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা বিভিন্ন জলদস্যু বাহিনীর প্রধান, সদস্যরা জানান তাঁদের নতুন জীবনের অনুভূতি, অভিজ্ঞতা।
আজ সোমবার বাগেরহাটের মোংলায় সুন্দরবন জলদস্যু মুক্ত দিবস পালন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে স্থানীয় বাসিন্দা, বনের মৌয়াল, ট্যুর অপারেটর ও সাবেক দস্যুদের অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ দেওয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলে মহিতোষ বলেন, আগে জলদস্যুদের আতঙ্কে সুন্দরবনে যেতে পারতাম না। বনে গেলেও সব সময় আতঙ্কে থাকতাম। কিন্তু এখন আমরা নির্ভয়ে মাছ ধরছি।
দীর্ঘ ১০ বছর ধরে সুন্দরবনে পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক শামস ইবনিস রাসেল। অনুষ্ঠানে রাসেল বলেন, আমি পেশায় একজন ট্যুর অপারেটর। আমার প্রতিষ্ঠানের নাম বিউটিফুল বাংলাদেশ কোস্টার ট্রাভেলস। আমি ১০ বছর ধরে সুন্দরবনে ট্যুর অপারেটর করছি। আগে এখানে পর্যটকেরা আসতে ভয় পেতেন। এখন আমাদের ট্যুর বুকিং দিতে ফোন করলে বলতে পারি সুন্দরবন এখন দস্যুমুক্ত। ভয় নেই। যেকোনো জায়গায় যেতে পারি।
মাস্টার বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড সোহাগ আকন্দ বলেন, আমি র্যাবের ডাকে সাড়া দিয়ে প্রথম মাস্টার বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে আত্মসমর্পণ করি। আমি এখন ভালো আছি। ব্যবসা করছি। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও র্যাবের কর্মকর্তারা আমাদের দেখাশোনা করছেন। সবাই আমাদের ভালোবাসেন। আমাদের একটাই দাবি, সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল দস্যুতা ছেড়ে আত্মসমর্পণ করলে আমাদের মামলাগুলো নিষ্পত্তি করে দেওয়া হবে। এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত সাবেক দস্যুরা করতালি দিয়ে তাঁকে সমর্থন জানান।
সোহাগ আকন্দ আরও বলেন, দস্যুতা ছেড়ে আসায় সরকার ও র্যাবের পক্ষ থেকে অনুদান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনুদানের টাকা মামলার চালাতেই ব্যয় হচ্ছে। আপনারা টাকা দেন আমরা দেই মামলায়। আমরা ভোগ করতে পারি না। তাই আমাদের ৩২টি বাহিনীর ৩২৮ জন সদস্যের আকুল আবেদন, আমাদের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করে দিলে আমরা ভালোভাবে বাঁচতে পারতাম।