যশোর পৌর শহরের খড়কি এলাকায় অবস্থিত আইডিয়া পিঠা পার্ক। রমজান উপলক্ষে এখানে প্রতি শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বসে বাজার। চাল, আলু, ডাল, চিনি, তেল, পেঁয়াজ, ছোলা, চিড়া, খেজুরসহ ৯টি পণ্য পাওয়া যায় এই বাজারে। ক্রেতা দরিদ্র, নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। তাঁদের কেউ অর্ধেক দামে এই বাজার থেকে পণ্য কিনে নিয়ে যান। যাঁদের সেটুকু সামর্থ্যও নেই, তাঁরা বিনা মূল্যে পণ্য নিয়ে যান।
‘আইডিয়া-সানাবিল লস প্রজেক্ট’ নামে ব্যতিক্রমী বাজারের আয়োজন করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থা’। ‘মানব কল্যাণে আমরা ঠকতে চাই’ এই স্লোগানে নিয়ে পুরো রমজান মাসজুড়ে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ৫৩৭ পরিবারকে বাজার মূল্যের অর্ধেক মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ বাজারে অর্ধেক মূল্যে পণ্য কিনতে পাওয়ায় খুশি পরিবারগুলো।
খড়কি দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা খন্দকার জাহাঙ্গীর। ষাট ষাটোর্ধ্ব জাহাঙ্গীর আগে ছিলেন বাসের চালক। এখন বয়স আর অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিনের এই পেশাটি ছেড়েছেন বছর পাঁচেক হলো। পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। তাই অর্ধেক মূল্যে ‘আইডিয়ার’ পণ্য কিনতে এসেছেন তিনি। এখান থেকে তেল, ডাল, ছোলাসহ ৯টি পণ্য কিনে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
খন্দকার জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বাজারে যে জিনিসের দাম বাড়ছে। কম দামে পণ্য পেয়ে আমার মতো গরিব মানুষের অনেক উপকার হইছে। এই সংগঠনের মতো আরও দুটো সংগঠন হলে এই অঞ্চলের গরিব মধ্যবিত্তদের খুব উপকার হতো।’
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, যশোর শহর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় জরিপ চালিয়ে ৫৩৫ জন নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারকে শনাক্ত করে সংগঠনটি। যারা দ্রব্যমূল্যের এ বাজারে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন, তাদের জন্য রমজানজুড়ে প্রতি সপ্তাহে শনিবার এ বাজার থেকে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।
তিন বছরের ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে পণ্য নিতে এসেছেন খড়কি এলাকার গৃহবধূ আবেদা সুলতানা। পণ্য ক্রয় করে বাড়ি ফেরার পথে তিনি বলেন, ‘৫ সদস্যের সংসার। স্বামী ইজিবাইক চালক। যে আয় তা দিয়ে সংসার চলে না। বাজার করতে গেলে প্রয়োজনের জিনিস একটা কিনলে আরেকটা কিনতে পারি না। এই ‘আইডিয়ার’ সদস্যরা আমাদের বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিয়েছেন। অর্ধেক দামে চাল, ডাল, তেল, আলু, খেজুর অনেক কিছু কিনেছি। মাত্র সাড়ে ৫৫০ টাকায়। এত মাল পেয়ে আমি খুব খুশি।’
আবু হাসান নামে এক রিকশাচালক বলেন, ‘নয় ধরনের জিনিস কিনেছি। এত কম দামে বাজার পাব স্বপ্নেও ভাবিনি। এই ৯টি পণ্যের বাজার দর প্রায় ১২ শ টাকা। তবে আমি কিনেছি সাড়ে ৫ শ টাকায়। এমন কাজের জন্য এই সংগঠনকে দোয়া ছাড়া কিছু করার নাই আমাদের।’
আইডিয়া সমাজ কল্যাণ সংস্থার প্রধান উপদেষ্টা যশোর সরকারি এমএম কলেজের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন বলেন, মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকেরা কারও কাছে হাত পাততে পারে না। কারও অনুদানও গ্রহণ করতে লজ্জাবোধ করেন। আর রমজান মাসে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে মধ্যবিত্তের যে দুশ্চিন্তার কারণ হয়, তার জবাবে তরুণ স্বেচ্ছাসেবীদের এই আয়োজন। দ্রব্যমূল্যের চোখরাঙানির এই বাজারে লস প্রজেক্ট হাসি ফুটিয়েছে এসব পরিবারের মুখে।
তিনি আরও বলেন, ‘মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্তরা অর্ধেক দামে পণ্য কিনতে পারলেও যাদের এই সামর্থ্য নেই তাদের কেউ খালি হাতে ফিরছে না। আমাদের শক্তি সামর্থ্য অনুযায়ী বিনা মূল্যে পণ্য দেওয়া হচ্ছে।’
গত বছর আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থা এই বাজার চালু করে। ঈদুল ফিতরের আগে এখান থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস ও ঈদ সামগ্রী কেনা যাবে।