কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলা ও পেট্রল ঢেলে ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে লাশ নিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন নিহত-আহতের স্বজন ও এলাকাবাসী।
আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চিলমারী গ্রামে নিহতদের লাশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করা হয়। এরপর সকাল ১০টার দিকে জানাজা শেষে স্থানীয় গোরস্থানে তাঁদের দাফন করা হয়।
এর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে রাত ১টার দিকে চিলমারীরে তাঁদের মরদেহ এসে পৌঁছায়। ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত রোববার সকালে তাঁরা মারা যান।
নিহতরা হলেন, চিলমারী গ্রামের তোফাজ্জল হোসেননের ছেলে আকতার মন্ডল (৪০) এবং একই গ্রামের দবির মণ্ডলের ছেলে দিনু মণ্ডল (৬৫)।
এ ঘটনায় বর্তমানে দগ্ধ ও গুরুতর আহত হয়েছেন অনেকেই। আহতদের মধ্যে একই গ্রামের ফারুক মণ্ডল (২২) শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে, আব্দুর রহমান কাজীর ছেলে সাইদুল কাজী (৩০) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, বিশু মণ্ডলের ছেলে ফজলু ডাক্তার ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে এবং জখম ও দগ্ধ প্রায় ১০ জন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনায় গত শুক্রবার দুপুরে মোজাম মণ্ডল বাদী হয়ে ৭৩ জনের নামসহ ১০০-১২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মোট ২১ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ও পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের ১৪ জনকে রোববার দুপুরে জামিন দিয়েছেন আদালত। জামিনের ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবার ও সাধারণ মানুষ।
মানববন্ধনে বক্তারা ও নিহতের স্বজনেরা জানান, পুড়িয়ে হত্যার উদ্দ্যেশ্যে প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁদের বসতঘরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে প্রায় ২৫ জনকে গুরুতর আহত করে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢাকা ও কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ১৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আকতার মন্ডল ও দিনু মন্ডল ঢাকায় মারা গেছেন। তাঁরা হত্যাকারী ও হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এ বিষয়ে দৌলতপুর থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, ‘অগ্নিদগ্ধ আকতার মন্ডল ও দিনু মন্ডল চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় মারা গেছেন। তাঁদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ঘটনায় ২১ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চিলমারী বাজারপাড়ায় জমি সংক্রান্ত বিরোধ, পূর্ব শত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মণ্ডল গ্রুপের লোকজনদের ওপর হামলা ও বসতঘরে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় প্রতিপক্ষ। এতে পাঁচজন গুরুতর দগ্ধসহ অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন আহত হন। খবর পেয়ে দৌলতপুর থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।