কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের আলোচিত সেই তাছেরের দরবার শরিফে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে ওই এলাকার কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা। গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত দফায় দফায় হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ, র্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনেন।
স্থানীয়রা জানান, দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের কল্যাণপুর চরদিয়াড় এলাকায় অবস্থিত দরবার শরিফে সেখানকার ‘পীর’ সৈয়দ তাছের আহমেদের ফিরে আসার গুজব ছড়িয়ে পড়ে। গত কয়েক দিন ধরে এলাকায় এই গুজব চলতে থাকে। গত বছরের মাঝামাঝি ওই দরবার শরিফের খাদেম রাশেদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তাছের ‘পীর’ নিজের দরবার শরিফের ভেতরে ঘটে যাওয়া ওই হত্যা মামলার অন্যতম আসামি।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতেই সন্ধ্যার পর ফের দ্বিতীয় দফায় দরবার শরিফে হামলা চালায় জোটবদ্ধ গ্রামবাসী। এ সময় তারা নতুন করে হামলা, ভাঙচুর করে এবং স্থাপনাসহ মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। দফায় দফায় এই হামলার ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়। তাদের মধ্যে তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য গ্রামবাসীকে নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খান। ভেড়ামারা উপজেলা থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে পরপর দুই দফায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতির একপর্যায়ে মাইকে গ্রামবাসীকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানায় পুলিশ। তারা পুলিশের কথায়ও পিছু হটেনি। তারা সেখান থেকে কথিত পীর সৈয়দ তাছের আহমেদের দরবার শরিফটি উচ্ছেদের দাবিতে অনড় অবস্থানে থাকে। পরে স্থানীয় হোগলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা সেলিম চৌধুরী সেখানে উপস্থিত হয়ে মাইকের মাধ্যমে গ্রামবাসীর দাবির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও তাঁরা দরবার শরিফের চারপাশে অবস্থান নিয়ে ঘেরাও করে রাখে।
রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল জব্বার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দৌলতপুর-ভেড়ামারা সার্কেল) ইয়াসির আরাফাত, দৌলতপুর থানার ওসি এস এম জাবীদ হাসানসহ র্যাব ও পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
দৌলতপুর-ভেড়ামারা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘উত্তেজিত গ্রামবাসীকে নিয়ন্ত্রণ করতে শক্ত অবস্থানে না গিয়ে আমরা তাদের শান্ত করতে সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। ঠিক কী কারণে তারা হঠাৎ করেই এমন অগ্নিমূর্তি ধারণ করল, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। এই মুহূর্তে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পুনরায় এ ধরনের সহিংস ঘটনা এড়াতে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তদন্তের পর এ ব্যাপারে মামলা দায়ের করা হবে।’
উল্লেখ্য, দৌলতপুর উপজেলার কল্যাণপুর দরবার শরিফের ভেতরে গত বছরের ৬ জুন সেখানকার খাদেম রাশেদকে মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যার ঘটনায় দরবার শরিফের কথিত পীর সৈয়দ তাছের আহমেদসহ ১১ জনকে আসামি করে মামলা করেন রাশেদের বাবা আব্দুর রাজ্জাক। এ মামলায় পুলিশ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হলেও অন্যতম আসামি কথিত পীর তাছের আহমেদসহ অন্য আসামিরা পলাতক রয়েছেন। গত ১৭ অক্টোবর সৈয়দ তাছের পীর তাঁর বদলে নকল এক আসামিকে কুষ্টিয়ার আদালতে আত্মসমর্পণ করান। কিন্তু মামলার বাদী ও তাঁর পক্ষের আইনজীবীরা তিনি আসল তাছের নন বলে শনাক্ত করেন। কথিত পীর তাছের আহমেদের বদলে নাজিম উদ্দিন নামে সেই ডামি বা নকল আসামিকে আদালতে আত্মসমর্পণ করানোর এ ঘটনা নিয়ে সে সময় জেলাজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়।