হোম > সারা দেশ > যশোর

সাজা ৫ দিনের, জেলে ৯ বছর

জাহিদ হাসান, যশোর

বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে যশোর শহরে প্রবেশ করেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা রাজকুমার (৪৫)। চলাচলের গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় ২০১৪ সালের ২৮ জুলাই সন্ধ্যায় তাঁকে আটক করে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ। পরদিন যশোর জেলা দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হলে রাজকুমারকে বিচারক পাঁচ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৩০০ টাকা জরিমানা করেন। তাঁর সেই সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে ওই বছরের ৩ এপ্রিল। তবে এখনো কারাগার থেকে তাঁর মুক্তি মেলেনি। সাড়ে ৯ বছর ধরে তিনি কারাগারে আটক রয়েছেন। 

শুধু রাজকুমারই নন, তাঁর মতো যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ৪০ বিদেশি নাগরিক রয়েছেন, যাঁরা বিভিন্ন মেয়াদের সাজা শেষ করেও দেশে ফিরতে পারছেন না। এর মধ্যে ৩৯ জন ভারতীয় আর একজন নেপালের। তাঁরা অবৈধ পথে ভারত থেকে বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা-যাওয়ার সময় বিজিবি ও পুলিশের হাতে আটক হন। এতে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হচ্ছে। ভারত ও নেপাল সরকারের সদিচ্ছার অভাবে এসব বন্দী নিজ দেশে ফিরতে পারছেন না—ভাষ্য সংশ্লিষ্টদের। 

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ৮ জুন যশোরের চৌগাছা থেকে ৪৯ বিজিবির একটি টহল দল বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপরাধে পবন কৃষ্ণকে আটক করে। পরদিন পুলিশ তাঁকে আদালতে হাজির করলে পবনকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন। রায় অনুযায়ী ২০১৫ সালের ৭ ডিসেম্বর তাঁর সাজা শেষ হয়। কিন্তু আজও তিনি নিজের দেশে ফেরার অপেক্ষায় কারাগারে অবস্থান করছেন। আইনি জটিলতায় তাঁকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। একই অবস্থা ভারতের পালা জেলার পুলিশ স্টেশন এলাকার মোহনের (৩৭)। কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন এই বন্দী স্বজনদের পরিচয় বলতে পারেননি। সাজা শেষ হওয়ার পরও দীর্ঘদিন কারাগারে থাকায় তিনি স্মৃতিশক্তির সমস্যায় পড়েছেন। 

কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, বন্দীদের বেশির ভাগই কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন। লেখাপড়া জানেন না। পরিবার আর্থিকভাবে অসচ্ছল। যে কারণে তাঁদের দেশের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কী করতে হবে, তা তাঁরা বলতে পারছেন না। এমনকি তাঁদের পরিবারের লোকজনের নামও অনেকে বলতে পারছেন না। এ ছাড়া এসব বন্দীর অধিকাংশই বাংলা ভাষা বোঝেন না। ফলে অসহায়ের মতো তাঁরা কারাগারে আটক রয়েছেন। আবার এসব বন্দীকে মুক্তি না দিতে না পেরে কারা কর্তৃপক্ষও বিপাকে রয়েছে। তাঁদের থাকা, খাওয়া, চিকিৎসাসেবার ব্যয় মেটাতেও সরকারের অর্থ অপচয় হচ্ছে। পরিবারে ফেরার জন্য তাঁদের আকুতি পৌঁছাচ্ছে না নিজ দেশের কর্তৃপক্ষের কানে। 

এদিকে সাজা শেষ হলেও ভারতে ফিরতে পারেননি শামীম ওরফে সমীর (৩০)। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি সকালে কারাগারের ভেতরে গোসল করতে গিয়ে মারা যান তিনি। সমীর ভারতের উত্তর প্রদেশের বলরামপুর জেলার গাইশ্রী থানার জুনেতাপুর শ্রীনগরের ধনেন্দ্রনাথের ছেলে। 

এ বিষয়ে জেলার শরিফুল আলম বলেন, ‘সমীরের মৃত্যুর পর ভারতীয় হাইকমিশনারকে তাঁর লাশ নেওয়ার বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো সাড়া না পাওয়ায় খুলনা কারাগারের মাধ্যমে ওখানেই ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী তাঁর সৎকার করা হয়।’ 

কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রায়ই জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি ও জেলা লিগ্যাল এইড সভায় বিষয়টি নিয়ে উপস্থাপন করে কারাগার কর্তৃপক্ষ। প্রতি তিন মাস পরপর এসব বন্দীর বিষয়ে প্রত্যাবাসনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। একই সঙ্গে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ যশোর ব্যাটালিয়নের (৪৯ বিজিবি) অধিনায়কের কাছে সর্বশেষ ৬ মার্চ চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিজিবির কাছ থেকে এখনো কোনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। 

মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একজন মানুষ অপরাধের সাজা শেষ হওয়ার পরও সাজা ভোগ করছেন, এটা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। তবে বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র ও ভারতীয় হাইকমিশনারের কাছে চিঠি দিয়েছি। তাঁদের প্রতিনিধিও এসেছেন। কিন্তু বেশির ভাগ বন্দী মানসিক ভারসাম্যহীন। ঠিকানা বলতে পারেন না। তার পরও ভারতীয় সরকার এবং আমাদের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্রুত উদ্যোগ নিলে তাঁদের নিজ দেশে ফেরানো সম্ভব।’ 

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার শরিফুল আলম বলেন, ‘সাজা শেষ হওয়ার পরও দীর্ঘদিন হাজতবাস করায় তাঁরা কিছুটা মানসিকভাবে অসুস্থ। বিষয়টি নিয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছি। আইনি কিছু জটিলতার কারণে তাঁরা ছাড়া পাচ্ছেন না। সর্বশেষ ৬ মার্চ তিনজনের বিষয়ে যশোর বিজিবিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোনো উত্তর পাইনি।’ 

যশোর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। সর্বশেষ কারাগার কর্তৃপক্ষ বিএসএফকেও চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবহিত করেছে। এসব আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে একটু বিলম্ব হচ্ছে। তবে বিষয়টি নিয়ে আমরা তৎপর আছি।’ 

আবাসিক হোটেল থেকে জাপা নেতার মরদেহ উদ্ধার

খুলনায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে সাংবাদিক নিহত, প্রাণিচিকিৎসক আশঙ্কাজনক

খুলনায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে সাংবাদিক নিহত

খুলনায় আদালত প্রাঙ্গণে জোড়া খুনের ঘটনায় যুবক গ্রেপ্তার

রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ১৩ দফা দাবি পরিবেশ ও উন্নয়ন ফোরামের

প্রার্থীর আবেদনের ভিত্তিতে নিরাপত্তা দেওয়া হবে: কেএমপি কমিশনার

আমির হামজার বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের বিবৃতি

খুলনায় আবাসিক হোটেল থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার

সাত দফা দাবিতে মিরপুরে রেলপথ অবরোধ, দুই ঘণ্টা পর প্রত্যাহার

খুলনার পূর্ব রূপসায় যুবককে গুলি করে হত্যা