হোম > সারা দেশ > খাগড়াছড়ি

খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি: বাড়ি বাড়ি কয়লার চুল্লি

আবদুল মান্নান, মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) 

খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার ঢাকাইয়া শিবির এলাকায় বাড়ির আঙিনায় কয়লার চুল্লি। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার বাটনাতলী ইউনিয়নে বাড়ি বাড়ি চুল্লি তৈরি করে অবৈধভাবে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা উৎপাদন করা হচ্ছে। বাড়ির আঙিনা, ঘরদুয়ারের সামনেই বাণিজ্যিকভাবে এসব চুল্লি স্থাপন করা হয়েছে। পরিবেশের পাশাপাশি কাঠ পোড়ানোর ধোঁয়ায় আশপাশের বাসিন্দারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

সরেজমিনে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউনিয়নটির ঢাকাইয়া শিবির, লালটিলা ও নবীনগর এলাকায় ৮০-৮৫টি পরিবার চুল্লির মাধ্যমে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা বানাচ্ছে। প্রতিটি পরিবারে গড়ে ২-৩টি হিসাবে অন্তত ২০০ চুল্লি রয়েছে। এর মধ্যে শতাধিক চুল্লিতে পোড়ানো হচ্ছে বনের গাছগাছালি। প্রতি চুল্লিতে মাসে ২০০ মণ কাঠ পুড়িয়ে ৯০০-১০০০ কেজি কয়লা উৎপাদন করা হচ্ছে; যা ২৭-৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। প্রতি কেজি কয়লার স্থানীয় পাইকারি মূল্য ৩০-৩২ টাকা। ১০০ চুলায় মাসে গাছ পুড়ছে ৮০০ টন। কয়লা হচ্ছে ১০০ টন।

জানা গেছে, বাটনাতলী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঢাকাইয়া শিবির, লালটিলা ও নবীনগর গ্রামে ২০০ পরিবারের বসবাস। এর মধ্যে অল্পসংখ্যক মানুষের আয়ের উৎস ধান চাষ। বাকি বাসিন্দারা টিলাভূমিতে বনজ, ফলদের বাগ-বাগান করে আয়রোজগার করেন। অন্যরা শ্রমজীবী। ভূমিনির্ভর আয়ের মানুষগুলো নিজ বাগ-বাগানে সৃজিত এবং কেনা গাছগাছালি দিয়ে ঘরদুয়ার ও আশপাশে চুল্লি বানিয়ে কয়লা উৎপাদন করে যাচ্ছেন। বছরের অন্তত ৯-১০ মাস গড়ে ১০০ চুলায় আগুন জ্বলে।

কাঠ পোড়ানোর সময় নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শ্রমিক বলেন, এখানে বেশির ভাগ মানুষ কয়লা উৎপাদন ও বিক্রির কাজে জড়িত। নিজের গাছের বাগান থাকলে এই ব্যবসায় আয় ভালো হয়। লাকড়ি কিনে করা কয়লায় লাভ কম। তবে দীর্ঘদিন কয়লার চুলায় কাজ করলে চোখমুখ জ্বালাপোড়া করে, নাক দিয়ে পানি পড়ে এবং শ্বাসকষ্ট হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকাইয়া শিবির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬০-৭০ গজ উত্তর-পশ্চিম কোণে নাকের আলী ও আবু সাঈদের বাড়ি। দুই পরিবারের ঘর ঘেঁষে রয়েছে পাঁচটি কয়লার চুলা। এর দুটিতে আগুন জ্বলছে।

জানতে চাইলে আবু সাঈদের সোজা উত্তর, ‘আমাদের আয়ের উৎস সবজি চাষ এবং কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করে বিক্রি। বিকল্প রোজগারের উৎস নেই। ফলে কয়লার ময়লা ও কষ্ট সয়ে আমরা বেঁচে আছি। স্থানীয় কয়েকজন পাইকারি ব্যবসায়ী ৩০-৩২ টাকা কেজি দরে কয়লা কিনে জেলা শহরে সরবরাহ করেন।

আবু সাঈদের বাড়ির ২০০-৩০০ গজ উত্তরে এমাদুল হকের বাড়ি। তাঁর ঘরের ৫০-৬০ গজ উত্তর-পশ্চিমে ৫-৭টি চুল্লি দেখা যায়। সেখানে জাহাঙ্গীর হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘বৃহত্তর ঢাকাইয়া শিবির এলাকায় ৮০-৮৫ পরিবারে গড়ে ৩-৪টি কয়লার চুল্লি রয়েছে। এর মধ্যে গড়ে ১০০ চুলায় বছরে অন্তত ৯-১০ মাস কাঠ পোড়ানো হয়। ৮০-৯০ দশকে মাথায় ও কাঁধে নিয়ে উৎপাদিত কয়লা স্থানীয় তিনটহরী ও ফটিকছড়ি উপজেলার নয়াবাজারে বিক্রি করতাম। এখন স্থানীয় পর্যায়ে কয়লা চলেই না। শহরকেন্দ্রিক চাহিদার ওপর বাজারজাত করতে হয়।’

মানিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা নাঈমুল হক বলেন, কয়লা তৈরির ধোঁয়ার সবচেয়ে বড় ক্ষতিকর হলো সূক্ষ্ম কণা। এই কণাগুলো চোখ এবং শ্বাসযন্ত্রের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। ফলে চোখ জ্বালাপোড়া, নাক দিয়ে পানি পড়া এবং ব্রঙ্কাইটিসসহ ক্যানসারের মতো মরণব্যাধিও হতে পারে।

উপজেলার গাড়ীটানা রেঞ্জের বন কর্মকর্তা মো. আবদুল হামিদ বলেন, উপজেলায় কোনো সংরক্ষিত বনাঞ্চল নেই। ব্যক্তি উদ্যোগে পরিবারের প্রয়োজনে কয়লা উৎপাদনে বাধা নেই। তবে বাণিজ্যিক উৎপাদন অবশ্যই বেআইনি।

মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আফরোজ ভূঁইয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থলবন্দর প্রকল্প: রামগড়ে তিন পাহাড় কেটে বন্দরের জমি ভরাট

শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ, মাঠে ঘুরছে শিক্ষার্থীরা

নিজের কিডনি দিয়েও স্বামীকে বাঁচাতে পারলেন না ফাতেমা

পাহাড় থেকে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি নির্মূল করা হবে: রিজিয়ন কমান্ডার

হারিয়ে যাচ্ছে ডোলের ব্যবহার

খাগড়াছড়িতে গাছ ফেলে সড়ক অবরোধ

চাঁদাবাজির অভিযোগে ইউপিডিএফের সদস্যকে গণপিটুনি, পুলিশে সোপর্দ

খাগড়াছড়িতে দোকানে রাঙামাটির যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ, পকেটে চিরকুট

পানছড়িতে ইউপিডিএফের হয়ে চাঁদা আদায়কারী আটক

খাগড়াছড়িতে ড্রেন থেকে জীবিত নবজাতক উদ্ধার