সময় তখন বেলা ২টা। তৃতীয় শ্রেণিতে চার শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নিচ্ছিলেন এক শিক্ষক। আর চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে একজন করে উপস্থিত দুই শিক্ষার্থী এক কক্ষে বসে গল্প করছিল। সেখানে কোনো শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন না।
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার ৯৯ নম্বর উ. পূর্ব ছোট কৈবর্তখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায় এ চিত্র। তখন প্রাক্-প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির হাজিরা খাতায় কোনো শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল না। কিন্তু সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে শিক্ষকেরা তৎক্ষণাৎ খাতা ভরাতে শুরু করেন।
বিদ্যালয়ের রেকর্ড অনুযায়ী, শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫১ জন হলেও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রতিদিন উপস্থিত থাকে ১০ থেকে ১৫ জন। অথচ এ বিদ্যালয়ে কর্মরত পাঁচ শিক্ষক।
বিদ্যালয়টিতে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ থাকলেও সেটি ব্যবহার অনুপযোগী অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক সাহিদা খানম বলেন, ‘মাল্টিমিডিয়া সামগ্রী এক মাস আগে পেয়েছি, এখনো সেটআপ হয়নি।’
এদিকে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি বিদ্যালয়ের সরকারি ল্যাপটপ বাসায় নিয়ে গেছেন এবং তা দিয়ে ব্যক্তিগত কাজ করছেন। তবে তাঁর দাবি, ‘ঈদের ছুটির পর স্কুলে না এনে বাসায় রেখেছি, মূল্যায়ন পরীক্ষার কাজে ব্যবহার করছি।’
শিক্ষার্থীদের বিষয়ে সাহিদা খানম বলেন, ‘আমার স্কুলে কাগজ-কলমে ৫১ জন শিক্ষার্থী। প্রতিদিন ৩০-৩৫ জন আসে। আজ হয়তো হাজিরা খাতায় কিছু লেখা হয়নি। দয়া করে সংবাদ প্রকাশ করবেন না, এটি মান-ইজ্জতের প্রশ্ন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজাপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আকতার হোসেন বলেন, ‘সরকারি ল্যাপটপ চুরির ভয়ে বাড়িতে রাখা হলেও তা প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আনতে হবে। হাজিরা ক্লাস চলাকালেই নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি যে এতটা কম, তা আমার জানা ছিল না। সোমবার আমি বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে যাব এবং প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সব শিক্ষককে শোকজ করা হবে।’