গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের মওলানা ভাসানী সেতুর রেলিংয়ে অস্বাভাবিক পরিমাণে ফাঁকা থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন সেতু দিয়ে হেঁটে চলাচলকারীরা। চলতি বছরের ২০ আগস্ট সেতুটি উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পরপরই সেতু দেখতে আসেন স্থানীয়সহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ। তাঁদের কাছে সেতুটি এখন রীতিমতো দর্শনীয় স্থান তথা বিনোদনকেন্দ্রে রূপ নিয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নির্মিত সর্ববৃহৎ এ সেতুতে ব্যয় হয় ৯২৫ কোটি টাকা। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৪৯০ মিটার এবং প্রস্থ ৯ দশমিক ৬ মিটার। অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকার (জিওবি), সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওফিড)। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর-চিলমারী সংযোগ সড়কে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে মওলানা ভাসানী সেতুটি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর দুপাশে রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ ফুট প্রস্থের পায়ে চলার পথ। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দেওয়া হয়েছে রেলিং। আর এ রেলিংয়ে আছে গার্ডারের ৬৪টি সংযোগস্থল। সংযোগস্থলগুলোর রেলিংয়ে অস্বাভাবিক পরিমাণে ফাঁকা। মেপে দেখা গেছে, ফাঁকা স্থানগুলোর দূরত্ব ১৫ থেকে ১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত। সেখান দিয়ে চলাচলের সময় সামান্য অসাবধানতায় ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা। পথচারীদের অনেকে আতঙ্কে থাকেন।
দর্শনার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, দিনের বেলায় সেতুর ফাঁকাগুলো দেখা গেলেও রাতে বোঝার উপায় থাকে না। এ দিকে সেতুতে চুরির ঘটনার পর এখনো সব বাতি জ্বলছে না। বিদ্যুৎ চলে গেলে আরও বিদ্ঘুটে অন্ধকার নেমে আসে সেতুজুড়ে। তখন মনে হয় সেতুর ৬৪টি সংযোগস্থলই যেন একেকটি মরণফাঁদ। তবে উপজেলা এলজিইডির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সেতুটি ওই ডিজাইনেই তৈরি করা হয়েছে।
বগুড়া থেকে সেতু দেখতে এসেছেন মো. আলমগীর হোসাইন। সঙ্গে স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে। ওই দম্পতি বলেন, ‘সেতুতে আনন্দ করতে এসে হাত ছেড়ে দিতে পারছি না ৫ বছর বয়সের মেয়ে আয়াতের। যদি কোনো কারণে ওই ফাঁকা জায়গা দিয়ে নদীতে পড়ে যায়, এই ভয়ে থাকি...।’
আরেক দর্শনার্থী মোছা. নার্গিস বেগম এসেছেন কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী থেকে। তিনিও এসেছেন তাঁর স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে। এ বিষয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আরও কয়েকবার এ সেতুতে ঘুরতে এসেছি। এখানে আসার কথা মনে হলেই এ ফাঁকা স্থানগুলোর কথা মনে হয়। তখন গা শিউরে ওঠে। খুবই ভয় হয়।’
আরেক মা শিরিন আক্তার দুই মেয়ের হাত ধরে রেলিংঘেঁষে হাঁটছিলেন। তাঁর বাড়ি সুন্দরগঞ্জ পৌরসভা এলাকায়। ক্ষোভ জানিয়ে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রেলিং ধরে সবাই হাঁটে। বিশেষ করে ছোট বাচ্চারা। আর সেই রেলিংয়ের মাঝে মাঝে ফাঁকা রয়েছে। বাচ্চাদের একা ছেড়ে দিতে পারি না। এরপরও সব সময় থাকতে হয় আতঙ্কে। দুর্ঘটনা এড়াতে ফাঁকা এ স্থানগুলো দ্রুত বন্ধের জোর দাবি জানাই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী তপন চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘এখানে আমি কোনো ঝুঁকি দেখছি না। কারণ আপনি রাস্তা দিয়ে হাঁটবেন, সেটা আপনি দেখে চলবেন না? তা ছাড়া এটা কোনো খেলা বা আনন্দের জায়গা নয়।’ এ সেতুতে কতটি এ ধরনের ফাঁকা স্থান আছে এবং ফাঁকা স্থানগুলোর দূরত্ব কত ইঞ্চি হতে পারে; সে বিষয়েও কোনো ধারণা দিতে পারেননি তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।’
জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি খুবই জরুরি। আমরাও এটি নিয়ে ভাবছি। সেতুর সৌন্দর্য ঠিক রাখতে গিয়ে দেরি হচ্ছে। তবে আর দেরি নয়। কারণ সৌন্দর্যের আগে গুরুত্বপূর্ণ মানুষের জীবন।’