টানা ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ বন্যা। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর অন্তত ২০টি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে ৩০টি গ্রাম। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এক লাখের বেশি মানুষ।
বন্যাকবলিত এলাকাগুলোয় নেই পর্যাপ্ত খাবার, বিশুদ্ধ পানি বা বিদ্যুৎ। অনেক জায়গায় এখনো পৌঁছায়নি সরকারি সহায়তা।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা-বুধবার সন্ধ্যা) জেলায় ৮২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তবে আজ (বুধবার) বৃষ্টি কিছুটা কমেছে। এতে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে।
ফুলগাজীর দেড়পাড়া, দৌলতপুর, গাইনবাড়ি, নাপিতকোনা ও উত্তর শ্রীপুর এবং পরশুরামের শালধর, অলকা, জঙ্গলঘোনা, দানিয়ালপুরসহ অন্তত ৩০টি গ্রাম পানির নিচে। হঠাৎ পানি বাড়ায় ঘরবাড়ি ছেড়ে অনেকে আশ্রয় নিয়েছে উঁচু জায়গা বা অন্যের বাড়িতে।
গাইনবাড়ির আছমা আক্তার বলেন, ‘রাতেই পানি ঢুকে যায় ঘরে। খাবার নেই, পানিও বিশুদ্ধ না।’ নাপিতকোনার জাহানারা বেগম বলেন, ‘আমরা নিজেরা বাঁধ বাঁচানোর চেষ্টা করেছি, কাজ হয়নি। এখন প্রতিবেশীর বাড়িতে আছি। খাবার ও পানির কষ্টে আছি।’
এ বিষয়ে ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহিয়া আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, এই বন্যায় অন্তত ৭৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে ১ হাজার ২০০ জন। বিতরণ করা হয়েছে শুকনা খাবার, স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট। রান্না করা খাবারও দেওয়া হচ্ছে।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান বলেন, ‘উপজেলার ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ হাজার, আর পানিবন্দী অন্তত ৭ হাজার মানুষ। শালধরে ১৫টি পরিবারের ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিলীন হয়েছে।’
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, বুধবার রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচে ছিল। পানি কমলে বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হবে।
নির্বাহী প্রকৌশলী আখতার হোসেন মজুমদার বলেন, মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানে বৃষ্টি বন্ধ হলে ভাঙন বাড়ার আশঙ্কা কম বলে জানান তিনি।
ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ফুলগাজী ও পরশুরামে ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। রান্না করা খাবারও দেওয়া হচ্ছে।