সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া আইডি খুলে বন্ধুত্ব গড়ে উন্নত দেশের ধনী ব্যক্তি পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিল একটি চক্র। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বন্ধুত্ব গড়ে তাঁরা ভুক্তভোগীদের পার্সেল পাঠাত। তাঁদের চক্রেরই এক সদস্য কাস্টমস অফিসার সেজে কল করত। একপর্যায়ে বন্ধুত্বের মান রাখতে বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়ে পার্সেল গ্রহণ করত ভুক্তভোগীরা।
গতকাল বুধবার এই চক্রের দুই নাইজেরিয়ানসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১০)। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক ও কদমতলীর শামীমবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন—আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের মূল হোতা নাইজেরিয়ান নাগরিক চার্লস ইফানাডি (২৭) ও ফ্র্যাঙ্ক কোকো (৩৫)। তাঁদের বাংলাদেশি সহযোগী শফি মোল্লা (৩৬) ও মোছা. মৌসুমি খাতুন (২৭)। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে একটি মোটরসাইকেল, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত আটটি মোবাইল ও ভুয়া ইনভয়েস জব্দ করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান র্যাব-১০ এর অধিনায়ক এডিশনাল ডিআইজি মো. ফরিদ উদ্দিন।
গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ফরিদ উদ্দিন জানান, আসামিরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া আইডি খুলে বিভিন্ন প্রোফাইল ঘেঁটে ঘেঁটে ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী উচ্চবিত্তসহ সহজ সরল মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। পরে নিজেকে পশ্চিমা বিশ্বের একটি উন্নত দেশের ধনী ব্যক্তি হিসেবে পরিচয় দিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও গভীর করার জন্য একটি উপহার পাঠানোর প্রস্তাব দিয়ে ঠিকানা হাতিয়ে নেয়। উপহারের মিথ্যা নাটক তৈরি করে প্রতারক চক্রের এক সদস্য কাস্টমস অফিসার সেজে ভুক্তভোগীদের ফোন করে। পরবতীতে ভিকটিম বন্ধুত্বের মান রাখতে উক্ত পার্সেল গ্রহণ করার জন্য প্রতারক চক্রটিকে বিপুল পরিমাণ টাকা দিতে বাধ্য হয়।
র্যাব-১০ এর অধিনায়ক বলেন, আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের বিদেশি নাগরিকেরা ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে এসে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া বাসায় অবস্থান নিয়ে গার্মেন্টস ব্যবসাসহ বিভিন্ন কাজ শুরু করে। গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালে তাঁরা বাংলাদেশি সহযোগীদের নিয়ে অভিনব প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। গ্রেপ্তার চার্লস ইফানাডির নামে আরও মামলা রয়েছে। মৌসুমি ও শফি আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রের বাংলাদেশি সদস্য। মূলত তাঁদের মাধ্যমেই এই প্রতারক চক্রের বিদেশিরা ভুক্তভোগীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি করে। কাস্টমস অফিসার পরিচয় দিয়ে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নেয়।
আসামি ফ্র্যাঙ্ক কোকোর বিষয়ে ফরিদ উদ্দিন বলেন, ফ্র্যাঙ্ক কোকো ২০২১ সালে ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে আসে। এর পরে চার্লস ইফানাডির সঙ্গে পরিচয়ে হয়। চার্লসের সঙ্গে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করে। নিজেকে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেয়। চার্লসের প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ৫ জন ভুক্তভোগী পেয়েছি। ভুক্তভোগীরা এই ঘটনায় লজ্জিত। লোভের কারণেই তাঁরা প্রতারিত হয়েছেন। চারজন ভুক্তভোগী ঢাকার আর একজন ফেনীর।’
ফরিদ উদ্দিন জানান, দেশে দুই হাজারের মতো নাইজেরিয়ান আছে। এদের ৫০ শতাংশ অবৈধভাবে দেশে বসবাস করছে।