চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মিরপুর থানার আহাম্মেদনগর এলাকার একটি বাসা থেকে ২৪ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ৬০ হাজার টাকা চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করে ভুক্তভোগী পরিবার। মামলার তদন্তে নেমে একটি সিসিটিভি ফুটেজ পায় পুলিশ। এতে দেখা যায়, দুই যুবক ফাঁকা বাসার তৃতীয় তলায় উঠে তালা ভেঙে মাত্র ৩০ মিনিটে সর্বস্ব লুটে নিয়ে যায়।
গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় দুই চোরকে শনাক্ত করা হয়। এরপর সাভার ও চাঁদপুরে অভিযান চালিয়ে দুই ভাইসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া তৃতীয় ব্যক্তি চোরাই স্বর্ণ কেনাবেচা করেন।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন—জুলহাস (৩১), বিল্লাল হোসেন (২৬) ও লিটন বর্মণ। গতকাল বৃহস্পতিবার সাভার ও চাঁদপুর থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় চুরি যাওয়া গয়নাসহ ৮.১০ ভরি স্বর্ণ, বিভিন্ন ধরনের চাবি, রেঞ্জসহ চুরি করার বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। আজ শুক্রবার দুপুরে মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ভোলার লালমোহন উপজেলার আবু কালামের ছেলে জুলহাস ও বিল্লাল। সেই ছোটবেলা থেকেই চুরি শুরু করেন তাঁরা। দুজনে ২০০৮ সাল থেকে চুরি শুরু করেন। তখন থেকে ১৫ বছর ধরেই চুরি করছেন।
তাঁদের দেওয়া তথ্যমতে, এই ১৫ বছরে তাঁরা দুই শতাধিক চুরি করেছেন। চুরি করেই তাঁরা অন্য জেলায় চলে যান। ফলে অধিকাংশ ঘটনায় তাঁরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন। এতগুলো চুরি করলেও তাঁরা ধরা পড়েন মাত্র ১০ বারের মতো। আর মামলা হয়েছে মাত্র তিনটি। অন্য সবাই সবকিছু চুরি করলেও জুলহাস ও বিল্লাল শুধু স্বর্ণ ও নগদ টাকা চুরি করেন। কারণ এ দুটি সহজেই বহনযোগ্য। সাধারণত সব চোর রাতের বেলা চুরি করলেও ব্যতিক্রম এ দুই সহোদর। তাঁরা চুরি করেন দিনের বেলায়। দিনের বেলায় সাধারণত যে সময়টাতে বাচ্চারা স্কুলে থাকে, সেই সময়টাকেই তাঁরা চুরির জন্য বেছে নেন। সেই সময় ঘরের পুরুষ সদস্যরা অফিসে থাকেন। আর নারী সদস্যরা বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে থাকেন। ফলে বাসা পুরো ফাঁকা থাকে। গাড়ি চালানোর সুবাদে আগে থেকেই এমন একটি বাসা টার্গেট করেন বিল্লাল। পরে জুলহাসসহ এসে নির্দিষ্ট সেই বাসায় চুরি করেন।
জুলহাসের শ্বশুর মো. আলাউদ্দিন। তিনি থাকেন চাঁদপুরের মতলবে। প্রতিবার চুরি করার পরপরই শ্বশুরবাড়ি চলে যান জুলহাস। জামাইয়ের এই চুরির কথা শ্বশুরের অজানা নয়। তিনি এতে বাধা দেওয়া দূরের কথা, উল্টো সহযোগিতা করেন জামাইকে। জামাই জুলহাস স্বর্ণ চুরি করে তা শ্বশুরের হাতেই তুলে দেন। আর শ্বশুর সেই স্বর্ণ বিক্রি করেন। মিরপুর থেকে চুরি করা স্বর্ণও জুলহাস তাঁর শ্বশুরের হাতেই তুলে দেন। শ্বশুর সেই স্বর্ণ চাঁদপুর উত্তর মতলবের ছেঙ্গারচর বাজারের একটি স্বর্ণের দোকানে বিক্রি করেন। অভিযান চালানোর সময় জামাই জুলহাস গ্রেপ্তার হলেও পালিয়ে যান শ্বশুর আলাউদ্দিন।