সুখের খোঁজে আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে ওঠেন ভূমি ও গৃহহীন মুক্তা আক্তার। কিন্তু দুই বছর পার না হতেই নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তিনি। তাঁর বসবাসরত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৪ নম্বর ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। খসে পড়ছে পলেস্তারা। গত বছরের সিত্রাংয়ে আলগা হয়ে গেছে ঘরের চাল। এমন পরিস্থিতিতে ভালো নেই বলে জানিয়েছেন মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার শিলই ইউনিয়নের দেওয়ানকান্দি এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মুক্তা আক্তারসহ অনেকেই।
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ‘ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য জমি ও গৃহ প্রদান’ কার্যক্রমের আওতায় এসব ঘর নির্মাণ করা হয়। যার অংশ হিসেবে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে উপজেলার দেওয়ানকান্দি এলাকায় ৭৭টি ঘর নির্মাণ করে উপকারভোগী পরিবারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ঘরপ্রতি নির্মাণ ব্যয় হয় ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দেওয়ানকান্দি আশ্রয়ণ প্রকল্পের পূর্ব পাশের ৭৬ নম্বর ঘরের বারান্দার চাল ও পিলার গত বছরের সিত্রাং ঝড়ে ভেঙে পড়ে আছে। দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে অধিকাংশ ঘরে। ১৪ নম্বর ঘরের পিলার ফেটে বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। অনেক ঘরের দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। এ ছাড়া ১, ৬, ১০, ৭০, ৭২, ৭৪, ৭৫, ৭৬ ও ৭৭ নম্বর ঘর তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়।
৪ নম্বর ঘরের শেফালি বেগম বলেন, ‘মাটির ঘরে থাকতে আমাদের ভয় না করলেও, এখন পাকা ঘরে এসে আমাদের ভয় করে। গত তুফানে পূর্ব দিকের দুটি ঘরের চাল উড়ে এবং পিলার ভেঙে পড়ে গেছে। ঝড়ের সময় আমি এবং আমার স্বামী আমাদের ঘরের চাল ধরে বসে ছিলাম, যাতে চাল উড়ে না যায়। আমাদের ঘরে যে ফাটল দিয়েছে, তাতে যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে।’
৬৭ নম্বর ঘরের আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঘরে বালুর জন্য থাকা যায় না। চিমটি দিলে ঘরের পলেস্তারা খুলে পড়ে যায়। এদিকে তিনটি দেড় ফুটের চাকা দিয়ে সেপটিক ট্যাংক করায় প্রতি মাসেই শৌচাগার মলমূত্রে ভরে যায়। পূর্ব পাশের ১২টি ঘরের জন্য একটি কল ছিল, সেটাও চুরি হয়ে গেছে।’
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মো. শাহীন বলেন, ‘পূর্ব পাশের ১২টি ঘরের মধ্যে সাতটি নির্মাণের পর থেকে কেউ থাকেন না। তাঁরা এখানে নিজেদের নামে ঘর নিলেও বসবাস করেন তাঁদের এলাকার নিজ বাড়িতে।’
রসমালা বেগম, রাশিদা বেগম, আয়শা বেগম, ফাতেমা বেগমসহ আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনেক বাসিন্দা জানান, পরিমাণমতো সিমেন্ট না দিয়ে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। পিলারে তো রড নেই। এখন দেয়াল ও পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে। বাতাস ছাড়লে ঘরে থাকতে ভয় করে। মাটির ঘরে ছিলেন তাঁরা, কিন্তু এতটা ভয় পেতেন না। এখন পাকা ঘরে এসে ভয়ে থাকতে হয় তাঁদের। ঘরে ওঠার পর থেকেই এ রকম ফাটল দিনে দিনে বাড়ছে। যেকোনো সময় ঘর ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তাঁরা।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘যেসব উপহারের ঘরে মানুষ থাকে না, তাঁদের নাম বাতিল করে অন্য আশ্রয়হীন ও গৃহহীন পরিবারকে দেওয়া হবে। যেখানে টিউবওয়েলের ব্যবস্থা নেই, সেখানে টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করা হবে।’
উল্লেখ্য, আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবায়েত হায়াত শিপলু ও একই উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি শেখ মেজবাহ উল সাবেরিনকে ওএসডি করা হয়।