জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পে বিভিন্ন সময় এক হাজারের অধিক গাছ কাটা হয়েছে। আরও শ খানেক গাছ কাটা হবে বলে জানিয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মেয়েদের তিনটি হলের জন্য ১৭৮টি কাঁঠাল গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির ২০৭ টি, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবনের সম্প্রসারণের জন্য ২০০টি, লাইব্রেরির জন্য দেড় শতাধিক, স্পোর্টস কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের দক্ষিণে শতাধিক গাছ, অতিথি ভবনের জন্য শতাধিক গাছসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে প্রায় এক হাজারের অধিক গাছ কাটা হয়েছে।
বিক্ষুব্ধ ছাত্র-ছাত্রীরা বলছেন, কোনোরকম পরিকল্পনা ছাড়াই গাছ কাটা হচ্ছে। আর প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে, উন্নয়নকাজ করতে হলে গাছ কাটার বিকল্প নেই। এদিকে পরিবেশবিদদের আশঙ্কা অপরিকল্পিতভাবে গাছ কাটার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃতি ও পরিবেশ হুমকির মুখে রয়েছে।
এভাবে ‘অপরিকল্পিত’ গাছ কাটার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিজ্ঞানীরা বলেন, ক্যাম্পাসে নানা প্রজাতির প্রাণী ও পাখির বিচরণ রয়েছেন। গুইসাপ, বেজি, শেয়াল, কাঠবিড়ালি ও অতিথি পাখিদের কথা বিবেচনায় না নিয়েই এই গাছগুলো কাটা হচ্ছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃতি ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি অংশের মনমতো এখানে কোনো অপরিকল্পিতভাবে পরিবেশ ধ্বংস করে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে করে প্রাণ-প্রকৃতির তথা জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সামনে আরও বিনষ্ট হবে। একই সঙ্গে প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থের অপচয় হচ্ছে। এসবের দায় নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।’
এদিকে গাছ কাটার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) নতুন প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান কর্মসূচি ও উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় বসে শিক্ষার্থীদের একাংশ। এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি তথা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে প্রায় সব কাজই চলমান। এ ক্ষেত্রে কাজ বন্ধ রাখার কোনো সুযোগ নেই। তবে যেসব কাজ এখনো শুরু হয়নি সেগুলোর বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। টারজান পয়েন্টে খেলার মাঠ নির্মাণ বন্ধ রেখে সকল অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের তৃতীয় ধাপের কাজ শুরুর আগে প্ল্যান পুনর্বিবেচনা করা হবে।’