মৃত্যুদণ্ডের সাজার বিধান চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদনটি করেন। এতে দণ্ডবিধির ৫৩ ধারা এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৬৮ (১) ধারাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
দণ্ডবিধির ৫৩ ধারায় মৃত্যুদণ্ডের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৬৮ (১) ধারায় কীভাবে সর্বোচ্চ এই সাজা কার্যকর করা হবে তার ব্যাখ্যা রয়েছে। এ দুটি ধারা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না—এ মর্মে রুল দেওয়ার আরজি জানিয়েছেন আইনজীবী।
আবেদনে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব, লেজিসলেটিব সচিবসহ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে বিবাদী করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, বাংলাদেশে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু এই মৃত্যুদণ্ডের বিধান সংবিধানের ৩২ ও ৩৫ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ছাড়া জাতিসংঘ ঘোষিত ১৯৪৮ সালের মানবাধিকার সনদ, ১৯৬৬ সালের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং ১৯৮৪ সালের নির্যাতনবিরোধী কনভেনশনে মৃত্যুদণ্ডকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এসব দলিলে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আর বিশ্বের ১১২টি দেশ এরই মধ্যে মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ করেছে বলে জানান তিনি।
অ্যাডভোকেট ইশরাত আরও বলেন, ‘আমাদের আইন ও সাজার ধারণা এসেছে ব্রিটিশদের তৈরি আইন থেকে। কিন্তু সেই ব্রিটেনে কিন্তু এখন আর মৃত্যুদণ্ডের সাজা নেই। আমাদের দেশে মৃত্যুদণ্ডের সাজা নিয়ে বছরের পর বছর একজন আসামি কনডেম সেলে জীবন কাটান। আবার সাজা চূড়ান্ত হলে ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া ও প্রস্তুতিও কিন্তু শারীরিক ও মানসিকভাবে পীড়াদায়ক।’
তিনি বলেন, ‘রাগের মাথায় বা পরিকল্পিতভাবে কাউকে খুন করলে আসামিকেও যদি আমরা ঠান্ডা মাথায় মেরেই ফেলি, তাহলে এটা হবে একটা নিষ্ঠুর পীড়াদায়ক ক্রিয়া। যা আমাদের সংবিধান কোনোভাবেই সমর্থন করে না। আর এখন কিন্তু যাবজ্জীবনের সংজ্ঞায় আমৃত্যু কারাদণ্ডের বিধান আছে। আপিল বিভাগের রায়ের পর বিচারকেরা যদি মনে করেন যে কোনো আসামি জঘন্য অপরাধ করেছেন তাহলে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিতে পারেন।’