‘আমাদের ছুটি হয়ে গিয়েছিল। ছুটির পর স্বাভাবিকভাবে আমরা বাসায় চলে আসি। কিন্তু হঠাৎ ভয়ংকর একটি শব্দ হয়। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি, দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। তা-ও আমাদের প্রাইমারি স্কুল সেকশনে। কী ঘটনা হয়েছে, তা জানতে স্বাভাবিকভাবে যাই ওইখানে। পরে দেখি, অনেকে খুব মারাত্মক আহত হয়েছে। দু-তিনটি বাচ্চা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলছে, আপু, বাঁচাও।’
রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক ছাত্রীর ভাষ্য এটি। গতকাল এমনই বিভীষিকার সাক্ষী হয়েছে রাজধানীর উত্তরার এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান সেখানকার একটি ভবনের ওপর পড়ে বিধ্বস্ত হয়।
প্রতিষ্ঠানটির একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সায়েম জানায়, সে বেলা ১টা ১০ মিনিটের পর বিকট শব্দ শুনতে পায়। এ সময় তারা কলেজটির ৪ নম্বর ভবনের একটি শ্রেণিকক্ষে ছিল। দৌড়ে এসে দেখতে পায়, হায়দার আলী ভবনে আগুন জ্বলছে।
এক শিক্ষক বলেন, ‘ছুটি হয়ে গিয়েছিল। শিক্ষার্থীরা গেটে অপেক্ষা করছিল। মুহূর্তেই দেখি, চারপাশে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। ধোঁয়ার মধ্যে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। আমি শুধু আগুনের তাপ অনুভব করছিলাম...আমার হাত পুড়ে যায়, মুখ ঝলসে যায়। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ঘটনার ভয়াবহতা লিখে পোস্ট করেন অনেকে। বিকেলের দিকে শাহরিন ইসলাম নামের একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা হয়। আহত শিক্ষার্থী রাফিয়ার ছবিসহ সে পোস্টে লেখা হয়, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী রাফসি আক্তার রাফিয়া উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে আছে। ‘খালপাড় ২ নম্বর ব্রিজ’ ছাড়া রাফিয়া আর কোনো কথা বলতে পারছিল না।
দুর্ঘটনার পর গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয় তৃতীয় শ্রেণির জুনায়েত হাসানকে। বিকেল পর্যন্ত তার অভিভাবকের সন্ধান পাওয়া যায়নি। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক আইডি থেকে তার অভিভাবকের সন্ধানে পোস্ট করা হয়। বিকেলে অবস্থার অবনতি ঘটলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায় শিশুটি।