হোম > সারা দেশ > মাদারীপুর

প্রশ্ন ফাঁস করে বাগানবাড়ি বানিয়েছেন অসীম, ব্যাংকেও আছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা

আয়শা সিদ্দিকা আকাশী, মাদারীপুর

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের কলাবাড়ি গ্রামের অসীম গাইন বিভিন্ন সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের উত্তর বিক্রি করে হয়েছেন কোটিপতি। গড়ে তুলেছে বাগানবাড়ি। কিনেছেন বহু জমি। ব্যাংকেও আছে বহু টাকা। 

বাবা দরিদ্র কৃষক হলেও মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে তিনি এই সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। এদিকে অসীম গাইন হঠাৎ এত সম্পত্তির মালিক হওয়ায় দুদক অনুসন্ধানে নেমেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। 

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের কলাবাড়ি গ্রামের মৃত ফটিক চন্দ্র গাইনের ছেলে অসীম গাইন (৪৮)। বাবা ছিলেন দরিদ্র কৃষক। দিন আনে দিন খান, এমনভাবেই চলত তাঁদের সংসার। গ্রামে তিনি ডিশ ব্যবসা করতেন। মাঝে মাঝে দালালদের মাধ্যমে বিদেশে লোকও পাঠাতেন অসীম গাইন। 

কখনো কখনো গরু কেনাবেচাও করতেন। সেই অসীম গাইন মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে বহু সম্পত্তির মালিক হন। পুরোনো একটি টিনের ঘরের পরিবর্তে নির্মাণ করেছেন দালানঘর। ২০ শতাংশ জমির ওপর অনেকটাই বাগানবাড়ির মত করে গড়ে তুলেছেন বাড়ি। ব্যাংকে আছে বহু টাকা। নিজ গ্রামসহ বিভিন্ন গ্রামে বহু জমিও কিনেছেন তিনি। এদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় মামলার পর থেকে অসীম গাইন ও তাঁর স্ত্রী রিক্তা গাইন পলাতক আছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৯ মার্চ মাদারীপুরের ১৮টি কেন্দ্রে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেই পরীক্ষায় অর্থের বিনিময়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও উত্তরপত্র সরবরাহ করে একটি চক্র। 

এ সময় পুলিশ ৮ জনকে আটক করে। এ ছাড়া ইলেকট্রিক ডিভাইস ও একাধিক মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। পরে এই ঘটনার পরদিন ৩০ মার্চ মাদারীপুর সদর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী রেজাউল করিম বাদী হয়ে অসীম গাইনসহ ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১৫ জনের বিরুদ্ধে মাদারীপুর সদর মডেল থানায় মামলা করেন। 

পরে অভিযান চালিয়ে অসীম গাইনের সহযোগী রনি বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত পলাতক অসীম গাইনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেননি। 

এ দিকে অসীম গাইনের ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা, আলিশান বাড়ি নির্মাণসহ বহু সম্পত্তির মালিক হওয়ার ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পায় দুদক। এরপর থেকে দুদক অনুসন্ধানে নেমেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, অসীম গাইন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাসহ সরকারি চাকরি নিয়োগ অনেক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার সঙ্গে জড়িত। একসেট প্রশ্ন উত্তরসহ দেওয়ার শর্তে ৫ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিতেন। মোবাইল ফোনে মেসেজ ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে উত্তর পাঠিয়ে দিতেন। সবচেয়ে বেশি টাকা নিয়েছেন গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের বহু প্রার্থীর কাছ থেকে। 

এভাবেই কয়েক বছরেই কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন অসীম গাইন। টিনের ঘরের পরিবর্তে দালান নির্মাণ করেছেন। বাড়ির আশেপাশেসহ বিভিন্ন গ্রামে নিজ নামে ও তাঁর পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের নামে একশ বিঘারও বেশি জমি কিনেছেন। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় মামলার পর থেকে সে বাড়িতে থাকেন না। পালিয়ে আছেন। সম্ভবত তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন। 

অসীম গাইনের বৌদি গৌরি দে বলেন, ‘অসীম গাইনের পারিবারিকভাবে কয়েক বিঘা জমিজমা আছে। তাছাড়া সে দীর্ঘদিন ধরে ডিশলাইন ও ইন্টারনেট ব্যবসা করেন। এ ছাড়া গরু বেচা-কেনাও করতেন। এইসব ব্যবসার আয়ের টাকা দিয়েই সে বাড়ি বানিয়েছেন। সে নির্দোষ। সে কোনো অন্যায় করেনি। তার বিরুদ্ধে একটি চক্র মিথ্যা অপবাদ দিয়েছেন।’ 

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘অসীম গাইনের বিরুদ্ধে মাদারীপুর ও ঢাকায় একাধিক মামলা আছে। তা ছাড়া বিভিন্ন মিডিয়াতে এ ব্যাপারে সংবাদ প্রচার হয়েছে। সেই সংবাদের কপিও সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়া মাদারীপুর দুদক কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগও পাওয়া গেছে। তাই ইতিমধ্যেই অসীম গাইনের হঠাৎ সম্পদ অর্জনের কারণ অনুসন্ধান করছে দুদক। প্রধান কার্যালয় থেকে নির্দেশনা পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ 

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাসুদ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার কাজের সঙ্গে অসীম গাইন ও তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরাও জড়িত আছে। অসীম ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থীদের সঙ্গে লাখ লাখ টাকার চুক্তি করেন। পরে তাঁর অন্য সহযোগীদের নিয়ে উত্তরপত্র মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সরবরাহ করেন। পুরো ঘটনা জেলার গোয়েন্দা পুলিশ নজরদারি রেখেছেন। গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তও করছে। দ্রুত প্রশ্নপত্র ফাঁস ও উত্তরপত্র সরবরাহের ঘটনায় মামলার চার্জশিট আদালতে দেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে এই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত অসীম গাইন, তা নিশ্চিত হয়েছে জেলা পুলিশ। এ ছাড়া এটা নিয়ে ঢাকা থেকে আলাদাভাবে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশও কাজ করছে।’ 

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ও উত্তরপত্র সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এরই মধ্যে পুলিশ ও দুদককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কেউ ছাড় পাবে না। দ্রুত সবাইকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।’

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান মারা গেছেন

খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে এসে একজনের মৃত্যু

আজ সন্ধ্যা ৭টা থেকে বন্ধ থাকবে মেট্রোরেলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন

রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-মেয়েসহ তিনজনের মৃত্যু

কেরানীগঞ্জের সেই মাদ্রাসার পাশে ফের বিস্ফোরণ, আহত ১

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ফার্মগেট নামার র‍্যাম্প বন্ধ

খালেদা জিয়ার জানাজা ঘিরে যেসব সড়কে যান চলাচল বন্ধ ও ডাইভারশন

শহীদ জিয়ার কবরের পূর্ব পাশে খোঁড়া হচ্ছে নতুন কবর

খালেদা জিয়ার জানাজা: যেসব পথে নিয়ন্ত্রিত থাকবে যান চলাচল

রাষ্ট্রীয় শোক: ঢাকায় ৩ দিন আতশবাজি, পটকা ফোটানো নিষিদ্ধ