করোনা মহামারির মধ্যে রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। এতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে আরও ৭৯ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে গত তিন দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৭১ রোগী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আতঙ্ক নয়, সচেতনতার মাধ্যমে ডেঙ্গু মোকাবিলা সম্ভব।
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা আলভিন আলীম (২২) কয়েক দিন আগে রাজধানীর সূত্রাপুরে মামার বাসায় বেড়াতে এসে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হন। তাঁকে রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শুধু আলভিনই নন, হাসপাতালটিতে পাঁচ দিনে ১৭ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া রাজধানীর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে রোগী ভর্তি রয়েছেন ৫৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, রোগীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলো রোগীর পরিচয় জানাতে চায় না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. শরীফ আহমেদ বলেন, মশকনিধন ও বংশবিস্তার রোধে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। কর্মীদের নিয়ে অভিযান ও সচেতনতা কর্মসূচি জোরদার করা হয়েছে। চলছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। আদ্–দ্বীন হাসপাতাল, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, সিএমএইচ, সেন্ট্রাল হাসপাতাল, আধুনিক হাসপাতাল, এভারকেয়ার হাসপাতালে রোগী ভর্তি রয়েছেন। রাজধানীর সরকারি–বেসরকারি ৪১টি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন ২০৮ জন। আর একজন রোগী রয়েছেন ঢাকার বাইরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, রাজধানীর রামপুরা, তেজগাঁও, মহাখালী, কাকরাইল, শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা, পল্টন, বাসাবো, সূত্রাপুরসহ কয়েকটি এলাকায় ডেঙ্গু রোগী বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক কর্মকর্তা অধ্যাপক মোজাহেরুল হক মনে করেন, ডেঙ্গুতে আতঙ্ক নয়, সচেতনতাই পারবে রুখতে। মশকনিধনে ডেঙ্গু ঠেকানো সম্ভব। সিটি করপোরেশনকে মশকনিধন জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করতে হবে।
করোনার মধ্যে সাধারণ রোগী, বিশেষ করে ডেঙ্গু রোগীদের সেবা যাতে ব্যাহত না হয়, সেদিকে সরকারকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ–উপাচার্য অধ্যাপক ডা. রশিদ–ই–মাহবুব।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, দু-একজন মানুষের দায়িত্বহীনতার কারণে শহর বা গোটা দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। সারা দেশে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য মন্ত্রণালয় বা বিভাগের কার্যক্রম পর্যালোচনার আন্তমন্ত্রণালয় অনলাইন সভায় মন্ত্রী বলেন, উত্তর সিটি করপোরেশনে মশা মারলে দক্ষিণ সিটির হবে না অথবা দক্ষিণে মারলে উত্তরে হবে না—এমনটি ভাবা উচিত নয়।