ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক সহকারী অধ্যাপক আজহার জাফর শাহর গাড়িচাপায় এক নারীর মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, মশাল মিছিল ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাবি শাখা। এর আগে বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠন টিএসসিসহ বিভিন্ন এলাকায় মশাল মিছিল করে। এদিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা। নারী শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচিতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতা–কর্মীদের সংহতি জানাতে দেখা যায়।
ঢাবির শামসুন নাহার হল সংসদের সাবেক ভিপি শেখ তাসনীম আফরোজ ইমি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে চুরি, ছিনতাই, নারী নিপীড়নসহ কোন ঘটনাটি হয় না! কখনো কোনো ঘটনার বিচার পাই না কেন? কেন এই প্রশাসন? কেন ভিসি একটি বাংলো দখল করে আছেন—যিনি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেন না? কেন এই প্রক্টর—যার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন ধরনের অনিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হয়েছে? শিক্ষার্থীদের জায়গা পড়ার টেবিল, রাস্তা না! কেন আজকে এতসব অনিয়মের বিরুদ্ধে আমাদের রাস্তায় নামতে হচ্ছে? একে তো তাঁরা আমাদের শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ দিতে পারে না। অন্যদিকে আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারে না তারা, শুধু পারে শিক্ষক হয়ে যাওয়ার পর নিজেরা বাংলো নিয়ে রাজনীতি করতে। এই ধরণের প্রশাসন ও ভিসি এবং শিক্ষক আমরা চাই না। অবিলম্বে নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’
১) ঢাবির রাস্তা যদি সিটি করপোরেশন এর অধীনে থাকে তাহলে এটা ঢাবির কর্তৃপক্ষের আওতায় আনতে হবে।
২) অনতিবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনিয়ন্ত্রিত যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং অভ্যন্তরীণ যানবাহনের ক্ষেত্রে চলন সীমা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
৩) ক্যাম্পাসের প্রত্যেকটা প্রবেশমুখে চেকপোস্ট বসাতে হবে।
ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন কবি সুফিয়া কামাল হল সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরা শারমিন, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা আদনান আজিজ চৌধুরী, ছাত্র ফেডারেশন ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম, আশরেফা খাতুন, দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী, সাকিবুর রনি, আবদুল্লাহ আল নোমান, গোলাম আজম, মোহাম্মদ রামিম, রাজিব কান্তি দাস ও আহামেদউল্যাহ সিয়াম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবকের বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এভাবে চারদিকে যানজট, পাগল, ভবঘুরের আড্ডাখানা করে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় বানানো সম্ভব? আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানাবো প্রশাসন যেন একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত ক্যাম্পাস উপহার দিতে বদ্ধ পরিকর হয়।’
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্যক্তিগত গাড়ির চাপায় নারীর মৃত্যুতে ক্যাম্পাসে ব্যক্তিগত গাড়ির অবাধ চলাচল ও গতিনিয়ন্ত্রণ করার আহ্বান জানিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
ঢাবির সাবেক শিক্ষক আজহার জাফর শাহর গাড়িচাপায় নারীর মৃত্যুতে জড়িতের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে তার জন্য ক্যাম্পাসে ব্যক্তিগত গাড়ির অবাধ চলাচল বন্ধ ও গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবি জানায় সংগঠনটি।
পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ক্যাম্পাস এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির অবাধ চলাচল বন্ধ করা এবং অনুমোদিত গাড়ির ক্ষেত্রে প্রত্যেক পয়েন্টে গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানায় সংগঠনটি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। নিরাপদ ক্যাম্পাসের জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় সেটা নিয়ে আমরা ভাবছি। আমাদের শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছে তা যৌক্তিক, তাদের দাবি আমলে নিয়ে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। গাড়িচাপায় এভাবে একজন নারীর মৃত্যুকে অমানবিক ও মর্মান্তিক বলেও মন্তব্য করেন উপাচার্য।’