ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোনো চর্চা হয়নি, কোনো গবেষণা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু বক্তৃতামালায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রমেশচন্দ্র মজুমদার মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম (গবেষণা, প্রতিবন্ধকতা ও পদ্ধতি) ’ নিয়ে বঙ্গবন্ধু বক্তৃতামালা-১৪ আয়োজন করে ঢাবির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড লিবার্টি সেন্টার। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মুনতাসীর মামুন।
প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘আজ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনা করতে বাধ্য হচ্ছি। তবে আগে কোনো আলোচনা আমরা করিনি। ‘৪৭ সাল থেকে ‘৭১ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে অনেক থিসিস হয়েছে। তারপরের ঘটনা নিয়ে আর কোনো গবেষণা হয়নি। ফলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়েও কোনো গবেষণা হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০০ সাল পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোনো শিক্ষক গবেষণাধর্মী কিছু লেখেননি। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোনো চর্চা হয়নি।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড লিবার্টি সেন্টারের পরিচালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. ফকরুল আলমের সভাপতিত্বে সভায় আলোচনা করেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আশফাক হোসেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মুর্শিদা বিনতে রহমান। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির।
মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা তবুও কেন তাঁকে নিয়ে কোনো চর্চা হলো না—এটি ভাবার বিষয়। এগুলো বলতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে অনেক খারাপ কথা বলতে হবে; সেগুলোতে যাব না।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকতার চাকরিকে আমরা সুবিধামতো বানিয়ে নিয়েছি। ফলে সমাজ বা রাষ্ট্র আমাদের যে সম্মান করার কথা, সেটি আমরা পাচ্ছি না। আগে রাজনীতিবিদেরা শিক্ষকদের কাছে আসতেন। এখন শিক্ষকেরা রাজনীতিবিদদের কাছে যান। পুরো বদল হয়ে গেল।’
শিক্ষকতা পেশায় হওয়া বদল নিয়ে এই ইতিহাসবিদ বলেন, ‘একাডেমিশিয়ানরা আর সে ধরনের গবেষণায় যাননি। লেকচারার হওয়ার আগে শিক্ষকেরা বাসায় ধরনা দেওয়া থেকে পুকুরের ইলিশ মাছ নিয়ে আসা—কী না করেন। যেদিন লেকচারার হয়ে যান, সেদিন থেকে আর পাওয়া যায় না।’
বঙ্গবন্ধু নিয়ে গবেষণা না হওয়ার কারণ হিসেবে মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘এখানে ভয় একটি বিষয়। আবার যখন (গবেষণা) করতে যাব, সেখানে উপাদান, সোর্স তেমন নেই। এ ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সম্পাদিত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তিনটি বই ভালো ভূমিকা পরে রেখেছে। এ ছাড়া সিক্রেট ডকুমেন্টস বড় সম্পদ।’
অধ্যাপক ড. ফকরুল ইসলাম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে জানতে এবং তাঁকে নিয়ে গবেষণা করতে ওনার নিজের বই আছে, সিক্রেট ডকুমেন্টস আছে, আরও অনেক বই আছে। তবে অনেক বই নেই আসলে। এটিই আশ্চর্যের বিষয়। মুজিববর্ষে হাজারো বই বেরিয়েছে। গবেষণার মতো কিছুই তো দেখছি না। আরও অনেক কাজ বাকি। আমাদের সেগুলো করতে হবে।’
অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির বলেন, ‘জাতির পিতাকে নিয়ে তেমন গবেষণা নেই। এখানে প্রচুর ফান্ড প্রয়োজন। তবে এর আগে গবেষণা-মনন থাকতে হবে। তাহলে আমরা ভালোভাবে বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরতে পারব।’