আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভুয়া পরিচয়ে টিকটক ব্যবহার করে প্রতারণা করে শতাধিক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক তৈরি, ব্ল্যাকমেল এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে টিকটক রাজ ওরফে আব্দুর রাকিব ওরফে খোকন নামে এক টিকটকারকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তার রাজ বিজিবির ল্যান্স নায়েক র্যাবে প্রেষণে বদলি হয়েছেন বলে পরিচয় দিতেন। র্যাবের ইউনিফর্ম পরে টিকটক ভিডিও তৈরি করে শতাধিক মেয়ের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক করে প্রতারণা করে আসছিল সে।
গতকাল রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ সময় তাঁর কাছ থেকে র্যাবের পোশাক, প্রতারণায় ব্যবস্থা মোবাইল, সিম ও বাঁশি উদ্ধার করা হয়।
আজ মঙ্গলবার সকালে কারওয়ান বাজারের র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার মঈন।
খন্দকার মঈন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে টিকটক সেলিব্রিটি বানানোর নামে বিভিন্ন দেশে নারী পাচার চক্রের মূল হোতা আশরাফুল মণ্ডল ওরফে বস রাফি, ম্যাডাম সাহিদা এবং টিকটক হৃদয় বাবু সহযোগী অনিকসহ বেশ কয়েকটি নারী পাচার চক্রের ৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল র্যাব-২ ও ৫ এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে টিকটকার রাজকে গ্রেপ্তার করা হয়। টিকটকে নিজেকে র্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে শতাধিক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক তৈরি, ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে ব্ল্যামেইল ও অর্থ আত্মসাতের বহু অভিযোগ রয়েছে।
র্যাবের মিডিয়া প্রধান বলেন, টিকটকার রাজ পেশায় বগুড়ার একটি আবাসিক হোটেল নিরাপত্তা কর্মী। কিন্তু র্যাবের পোশাক পড়ে নিজেকে র্যাব-৫ এ কর্মরত হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছিল। গত দু বছর ধরে সে টিকটক, ফেসবুক, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন মাধ্যমে র্যাব পরিচয় দিত। টিকটকে রাজের ২ মিলিয়নের বেশি ভিউ এবং দেড় মিলিয়ন ফলোয়ার রয়েছে। নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়েও নিজেকে উচ্চবিত্ত পরিচয় দিত। এই পরিচয় ফুটিয়ে তুলতে বিভিন্ন আলিশান বাড়ির সামনে ভিডিও তৈরি করত।
কমান্ডার মঈন বলেন, টিকটকে যেসব মেয়েদের দামি অলংকার পরিধান করা দেখত বা অবস্থা সম্পন্ন মনে করত তাদের টার্গেট করত রাজ। পরে বিভিন্ন প্রলোভনে প্রলুব্ধ করে তাঁদের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে হার, অলংকার ও অর্থ আত্মসাৎ করত।
গ্রেপ্তারের পর রাজের বরাত দিয়ে গণমাধ্যম প্রধান জানান, রাজের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি। সে আগে গার্মেন্টসে কাজ করলেও বর্তমানে বগুড়ায় একটি আবাসিক হোটেলের সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কর্মরত। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার পরে গত দেড় বছরে র্যাব কর্মকর্তা পরিচয়ে তিনটি বিয়ে করেছে। যদিও পরে তাঁর প্রতারণার বিষয়টি টের পেয়ে সবাই তাঁকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়। এ ছাড়া শতাধিক নারীকে সে বিভিন্নভাবে প্রতারিত করেছে। সে কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে আপত্তিকর ছবি ধারণ করে মোবাইলে সংরক্ষণ করত এবং ফেসবুক ও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিত।
সর্বশেষ নিজেকে র্যাব-২ এ বদলি হয়েছে, এমন তথ্য দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভিডিও তৈরি করতে রাজধানীতে আসে। এর পরেই গ্রেপ্তার হয় রাজ।