গভীর রাতে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থিত ‘প্রজন্ম চত্বর’-এর প্রতীকী স্থাপনাটি। তবে প্রতিকৃতিটি ভাঙার দায় কেউই স্পষ্টভাবে নিচ্ছে না। গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একে অপরের দিকে দায় ঠেলে দেওয়ার ঘটনায় সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা।
গতকাল শনিবার (১২ জুলাই) দিবাগত মধ্যরাতে শুরু হয় এ প্রতিকৃতি ভাঙার কাজ। শাহবাগ মোড়ের একাধিক চা বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাত ১২টার পরেই বুলডোজার এসে শুরু করে স্থাপনাটি ভাঙার কাজ।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর। তিনি বলেন, ‘গণপূর্ত অধিদপ্তরের আওতাধীন থাকায় তারাই ভেঙেছে বলে জানানো হয়েছে। আমাকে আগে জানানো হয়েছিল, ভাঙার সময় যেন কেউ প্রতিবাদ বা মব তৈরি করতে না পারে।’ তিনি জানান, মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, জুলাইকেন্দ্রিক একটি নতুন স্থাপনা নির্মাণ করা হবে, তাই এটি ভেঙে ফেলা হয়েছে।
তবে গণপূর্তের তরফ থেকে বিষয়টি অস্বীকার করে বলা হয়, ‘এটা গণপূর্তের আওতাধীন নয়, আমরা এ সম্পর্কে কিছু জানি না।’ একই সুরে কথা বলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তারা এ স্থাপনা ভাঙার বিষয়ে অবগত নয় বলে জানায়।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের মাধ্যমে গড়ে ওঠা ‘প্রজন্ম চত্বর’ পরিণত হয়েছিল একাত্তরের যুদ্ধাপরাধবিরোধী প্রজন্মের প্রতিবাদের প্রতীকে। এ জায়গায় গড়ে ওঠা প্রতিকৃতিটি ছিল সেই আন্দোলনের স্মারক।
প্রতিকৃতিটি ভাঙার পরে থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ একে ইতিহাস মোছার প্রয়াস বলছেন, কেউবা বলছেন সমসাময়িক রাজনীতি থেকে দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা। তবে রাতের আঁধারে এই নীরব উচ্ছেদে একটি প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে—শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এমন একটি স্থাপনা যখন রাতের আঁধারে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়, তখন সেটি কেবল ইট-পাথরের বিন্যাস নয়, এটি এক প্রজন্মের ইতিহাস ও স্মৃতিকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা কি না, সেটিই এখন জাতীয় বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু।