বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী বলেছেন, ‘আমাদের আমিরে জামায়াত যদি থাকতেন (মিটিংয়ে), তাহলে আমি বলতাম, নির্বাচন শুধু জনগণ দিয়ে হয় না। আমি ন্যাশনালি বলব না, যার যার নির্বাচনী এলাকায়, প্রশাসনে যারা আছে, তাদেরকে (প্রশাসনকে) অবশ্যই অবশ্যই (পরপর দুবার) আমাদের আন্ডারে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের কথায় উঠবে, আমাদের কথায় বসবে, আমাদের কথায় গ্রেপ্তার করবে, আমাদের কথায় মামলা করবে।’
শাহজাহান চৌধুরী আরও বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর জন্য আজকের এই সুযোগ ভবিষ্যতে আর আসবে না। (দেশের) দুর্নীতির টাকা বাদ দেন, পার্শ্ববর্তী দেশ হিন্দুস্তান থেকে বস্তা বস্তা টাকা দেশে ঢুকবে। আর অস্ত্র ঢুকবে।’
শনিবার (২২ নভেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি কনভেনশন সেন্টারে জামায়াতের চট্টগ্রামের নির্বাচনী দায়িত্বশীলদের সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। পরে তাঁর এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিক্রিয়া হয় ব্যাপকভাবে।
বক্তব্যে কেন্দ্রীয় নেতা মুহাম্মদ শাহজাহানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘যার যার নির্বাচনী এলাকায় প্রাইমারি স্কুলের মাস্টারকে দাঁড়িপাল্লার কথা বলতে হবে। উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষককে দাঁড়িপাল্লার কথা বলতে হবে। পুলিশকে আপনার পেছনে পেছনে হাঁটতে হবে। ওসি সাহেব আপনার কী প্রোগ্রাম সকাল বেলায় জেনে নেবে, আর আপনাকে প্রটোকল দেবে।’
শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘আমি আমার দক্ষিণ জেলায় অনেককে সহযোগিতা করেছি। তখন ক্যান্ডিডেট হিসেবে আমার নামও ঘোষণা করা হয়নি। জনগণের অভাব, অভিযোগ, চাহিদা বুঝতে হবে। আমার এলাকায় ডেকোরেশনের বয়দের নিয়ে সম্মেলন হয়েছে। অনেক এলাকায় হয়নি। আমরা তো তাদের ভোটারই মনে করতেছি না। সবাইকে নিয়ে সম্মেলন করতে হবে।’
জামায়াত নেতা বলেন, ‘আমাকে মাফ করবেন, নির্বাচন সংগঠন নয়। সংগঠন অবশ্যই লাগবে। সংগঠন আমাদের মৌলিক ভিত্তি। সংগঠনই আমাদের একমাত্র ধারক এবং বাহক। কিন্তু জনগণকে যদি জায়গা দিতে না পারেন, তাহলে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া কঠিন। যেমন বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার শুধু আওয়ামী লীগের লোক নিয়ে দেশ শাসন করতে চেয়েছে। জনগণকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। তাই জনতার আন্দোলনের মাঝে আওয়ামী লীগের নেতারা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।’
বক্তব্যের বিষয়ে জানতে জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরীকে কল দিলে সাড়া পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে জানতে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ শাহজাহানের মোবাইলে কল করা হলে সংযোগ মেলেনি।
১৯৯১ সালে শাহজাহান চৌধুরী চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসন থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে ১৯৯৬ সালে তৎকালীন প্রভাবশালী বিএনপি নেতা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অলি আহমদ তাঁকে হারিয়ে আসনটির নিয়ন্ত্রণ নেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি আসনটি জামায়াতকে ছেড়ে দিলেও অনড় অবস্থান নেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য অলি আহমদ। অলিকে মানাতে না পেরে বিএনপি আসনটি উন্মুক্ত রাখে। নির্বাচনে অলি আহমদকে হারিয়ে শাহজাহান চৌধুরী সবাইকে চমকে দেন।
২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী জরুরি অবস্থায় দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি মামলায় আসামি হওয়া নিয়ে জটিলতায় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শাহজাহান চৌধুরীকে প্রার্থী করেনি জামায়াত। যদিও মামলাটিতে পরবর্তী সময়ে খালাস পেয়েছিলেন তিনি। ওইবার আসনটিতে তৎকালীন চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির শামসুল ইসলাম প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।