চট্টগ্রামের ১৬ থানায় কর্ণফুলী নদীতে বালু উত্তোলন, বিক্রি ও পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। চাঁদাবাজি, সংঘর্ষ ও খুনের মতো ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। নিষেধাজ্ঞা না মেনে বালু বিক্রি বা পরিবহনের ঘটনায় ধরা পড়লে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এতে করে বিপাকে পড়ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারেরা।
গত এক বছরে চট্টগ্রাম নগরী এবং রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ায় বিভিন্ন ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই রাজনীতিসংশ্লিষ্ট। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, এসব হত্যাকাণ্ডের বেশির ভাগই ঘটেছে বালুমহালের বিরোধের জেরে।
আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন মাস নগরের ১৬টি থানা এলাকায় বালু উত্তোলন, বিক্রি ও পরিবহন বন্ধ রাখতে সংশ্লিষ্ট সব থানার ওসিকে নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ। দেড় সপ্তাহ আগে দেওয়া তাঁর ওই নির্দেশ বাস্তবায়নে কাজ করছে পুলিশ। সিএমপির উপকমিশনার (দক্ষিণ) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, চাঁদাবাজি, গুলিবর্ষণ ও খুনোখুনির ঘটনায় অরাজক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে বালু ব্যবসা বন্ধ রাখা হয়েছে।
নগরের বায়েজিদ থানার খোন্দকারপাড়ায় ৫ নভেম্বর বিএনপির নেতা এরশাদউল্লাহর নির্বাচনী গণসংযোগের সময় প্রতিপক্ষের গুলিতে মারা যান সরোয়ার হোসেন বাবলা। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, বালুমহাল, পাথর ব্যবসাসহ পূর্ববিরোধের জেরে তাঁকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যেই বালু ব্যবসা বন্ধের নির্দেশনা আসে।
গত ৭ অক্টোবর হাটহাজারীর মদুনাঘাট এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন বিএনপির নেতা আবদুল হাকিম। এ ঘটনায়ও রাউজানকেন্দ্রিক বালুমহালের বিষয়টি সামনে আসে। ১৩ নভেম্বর খুন হন রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সহসভাপতি আবদুল মান্নান। এর আগে ফেসবুকে পোস্ট করা এক ভিডিওতে রাতের আঁধারে অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। গত বছর নগরের চান্দগাঁও থানার শমসেরপাড়া এলাকায় দিনদুপুরে খুন হন ছাত্রলী গর্মী আফতাব উদ্দিন তাহসিন। ওই হত্যাকাণ্ডেও ইট ও বালু ব্যবসার বিরোধের যোগসূত্র পাওয়ার কথা জানায় পুলিশ। বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফতাব উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, চট্টগ্রাম নগরী ও এর বাইরে দুটি উপজেলায় গত কয়েক মাসে একাধিক খুনের ঘটনায় মূল বিরোধ ছিল বালুমহালকেন্দ্রিক।
জানা গেছে, ১৬ থানায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও মূলত বালু ব্যবসা হয় কর্ণফুলী নদীসংলগ্ন সিএমপির তিন থানা বাকলিয়া, চান্দগাঁও ও কর্ণফুলীতে। বাকলিয়া থানার নতুন ব্রিজ, ক্ষেতচর এবং চান্দগাঁও থানার কালুরঘাট ও মোহরা এলাকায় রয়েছে একাধিক বালুমহাল ও বালু বিক্রয়কেন্দ্র। শুধু কালুরঘাটেই বড় আকারের ৩-৪টি বালুমহাল ও বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। ছোট আকারের বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে আরও ডজনখানেক।
চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা প্রকল্পে নালা নির্মাণকাজে যুক্ত এক ঠিকাদার জানান, আগে যেখানে প্রতি ঘনফুট বালুর দাম ছিল ১৬-১৭ টাকা, সেখানে বর্তমানে ২৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আগে যত্রতত্র বালু পাওয়া যেত। কিন্তু এখন কোথাও বালু বিক্রি হচ্ছে না। কিনতে গেলে ট্রাকসহ থানায় নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। গোপনে কিছু জায়গায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আপাতত সেসব স্থান থেকে সংগ্রহ করে কাজ চালিয়ে নিচ্ছি।’
নগরের কালুরঘাটের বালু ব্যবসায়ী মো. ফারুক আজম বাদশা বলেন, ‘কালুরঘাট ও নতুন ব্রিজে দুই সপ্তাহ ধরে বালু ব্যবসা বন্ধ। এতে আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছি।’ কালুরঘাটে একটি বালু বিক্রয়কেন্দ্র পরিচালনা করেন মো. হাসান। তিনি বলেন, ‘শুনেছি নতুন ব্রিজের বালুমহাল নিয়ে ঝামেলায় খুনোখুনি হয়েছে। তার বিস্তারিত জানা নেই। কিন্তু এখন আমরা যারা ছোট ব্যবসায়ী তাঁদের পেটে লাথি পড়েছে।’