‘আমরা মৃত্যুর মুখে পড়েছি। আমাদের এখনো উদ্ধার করা হয়নি। দয়া করে আপনারা আমাদের বাঁচান। আমরা সবাই এখানে আছি। আমাদের বাঁচান।’ রকেট হামলায় এক সহকর্মীর মৃত্যুর পর ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকা পড়া ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজের সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার রবিউল আওয়াল তাঁদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য এই আকুতি জানিয়েছেন।
রকেট হামলায় ওই জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের মৃত্যুর পর এক ভিডিও বার্তায় তিনি এই আকুতি জানান।
ভিডিও বার্তায় জাহাজের সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির ৪৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রবিউল আওয়াল বলেন, ‘আমাদের জাহাজে কিছুক্ষণ আগে রকেট হামলা হয়েছে, একজন ইতিমধ্যে মারা গেছেন। আমাদের জাহাজে পাওয়ার সাপ্লাই নেই। ইমার্জেন্সি জেনারেটর দিয়ে পাওয়ার সাপ্লাই চলছে। আমরা মৃত্যুর মুখে পড়েছি। আমাদের এখনো উদ্ধার করা হয়নি। দয়া করে আপনারা আমাদের বাঁচান। আমরা সবাই এখানে আছি।’
এর আগে বুধবার রাতে ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে থাকা ওই জাহাজে রকেট হামলায় জাহাজটির থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান মারা যান। বর্তমানে জাহাজটিতে ২৮ জন নাবিক রয়েছেন। রকেট হামলার পর তাঁরা আতংকে দিন কাটাচ্ছেন।
বর্তমানে জাহাজে থাকা নাবিকরা কি অবস্থায় আছেন সেটি নিশ্চিত করে জানা সম্ভব হয়নি। জাহাজে থাকা কয়েকজন নাবিককে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপে নক করে পাওয়া যায়নি। তবে জাহাজটিতে রকেট হামলার পর জাহাজের সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার রবিউল আউওয়ালের মতো আরও কয়েকজন নাবিক ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে তাঁদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার আকুতি জানিয়েছেন। এসব ভিডিওতে জাহাজে থাকা বাকি ২৮ জন নাবিককে অক্ষত অবস্থায় দেখা গেছে।
জাহাজের ডেক ক্যাডেট ফারিয়াতুল জান্নাত তুলি এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজ থেকে বলছি। আমাদের জাহাজে কিছুক্ষণ আগে বোমার বিস্ফোরণ ঘটেছে। আমাদের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার স্যার মারা গেছেন। আমরা খুব বিপদে আছি আমাদের উদ্ধার করুন, প্লিজ।’
অপর একটি ভিডিওতে দেখা যায় একজন নাবিক বলছেন, ‘আপনার জানেন আমাদের এখানে স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় মিসাইল হামলা হয়। এতে আমাদের এক সহকর্মী নিহত হয়েছেন। এখন রাত ১১টা বাজে আমরা এখনো জাহাজে অবস্থান করছি। আমাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কিনা? এটি আমরা জানি না। আমরা সবাই আতঙ্কিত অবস্থায় আছি। বলা যায় না, এখানে আরেও বোমা বিস্ফোরণ হতে পারে। পুনরায় হামলা হতে পারে।’
ওই নাবিক আরও বলেন, ‘গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে আমাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই সত্য সঠিক নয়। এই দেখেন আমরা সবাই এখনো জাহাজে আছি। আমরা এখনো নিশ্চিত নই, আমরা কখন এখান থেকে নিরাপদ জায়গায় যেতো পারবো। কখন আমাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হবে। দয়াকরে আপনারা আমাদের জন্য যা করার দ্রুত করুন।’
তবে বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে থাকা ২৮ নাবিকে অক্ষত আছেন জানিয়ে বাংলাদেশে শিপিং করপোরেশনের নির্বাহী পরিচালক (বাণিজ্য) পিযূষ দত্ত। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তাঁদের নিরাপদে সরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। সরিয়ে আনার জন্য বন্দরের তীর থেকে কাউকে সেফটি ও সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য আমরা সরকার, পোলান্ড এবং রাশিয়ার দূতাবাস এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কথা বলছি। তাঁরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’