চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে সুপরিচিত হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার মৌসুম শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দিবাগত রাত দুইটার দিকে হালদা নদীর বিভিন্ন অংশে মা মাছ ডিম ছাড়তে শুরু করে। হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
হালদা নদী, যা চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার মধ্যে বয়ে যায়, ঐতিহ্যবাহী প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র। এ নদীর পানিতে মা মাছ নিয়মিত ঋতু অনুযায়ী ডিম ছাড়ে এবং এ কারণে এটি স্থানীয় মাছ চাষ ও প্রাকৃতিক মৎস্য সম্পদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘মৌসুমের অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে বজ্রসহ বৃষ্টি হলে নদীতে ঢলের মাত্রা বেড়ে যায়। তখন মা মাছ ডিম ছাড়তে শুরু করে। এ বছরও সেই নিয়মে গতকাল থেকে ডিম ছাড়া শুরু হয়েছে।’
উৎসবমুখর এই সময় নদীর দুই তীরে হাজার হাজার মানুষ একত্রিত হচ্ছেন। শত শত নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহকারীরা ডিম আহরণে ব্যস্ত। নদীর পানি থেকে সরাসরি ডিম সংগ্রহ করে তারা তা ভবিষ্যৎ মাছ চাষের জন্য সংরক্ষণ করেন।
ডিম সংগ্রহকারী প্রবীণ মাছ ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন সওদাগর বলেন, ‘রাত ৪টার সময় থেকেই আমরা নৌকায় বসে ডিম সংগ্রহ শুরু করেছি। হালদার মা মাছের ডিম প্রচুর পাওয়া যাচ্ছে। এখানে এসে একেকজন উৎসবমুখর হয়ে ওঠেন।’
স্থানীয়রা বলছেন, হালদা নদীর এ উৎসব শুধুমাত্র মাছের প্রজননেই সহায়ক নয়, বরং এলাকার মানুষের ঐতিহ্য ও জীবিকার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তারা নদীর রক্ষার প্রতি সতর্ক ও সচেতন।
হালদা নদীতে প্রতিবছর এই ডিম ছেড়ে প্রাকৃতিকভাবে মাছের নতুন প্রজন্ম জন্মায়। এতে স্থানীয় মাছের বৈচিত্র্য ও উৎপাদন বাড়ে। গবেষকরা বলেন, বিশ্বের মধ্যে এটি অন্যতম অদ্বিতীয় জোয়ারভাটা অঞ্চলে অবস্থিত প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র, যা দেশীয় মাছের প্রজননে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
প্রতিবছরের মতো এবারও স্থানীয়রা নদী সংরক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। ডিম সংগ্রহের সময় নদীর জল দূষণ ও দখলদারদের বিরুদ্ধে নজরদারি করা হচ্ছে। নদীর বাস্তুতন্ত্র অক্ষুণ্ণ রাখতে বিশেষভাবে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।