কক্সবাজারের চকরিয়া ও বান্দরবানের লামা সীমান্তবর্তী এলাকায় অবৈধ ইটভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের বিশেষ দল অভিযানে যাওয়ার পথে ছাত্রদল নেতা জমির উদ্দীনের নেতৃত্বে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ইটভাটার শ্রমিক ও যৌথ বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয় বিজিবির একটি গাড়ি।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) বেলা পৌনে ১১টার দিকে উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের বাদশারটেক এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়।
এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে চকরিয়া-মানিকপুর সড়কে চার ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। এ ঘটনায় উপজেলার কাকারা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্যসচিব জমির উদ্দীনসহ পাঁচজনকে আটক করেছেন যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। আটক অন্যরা হলেন দিদারুল ইসলাম (৫০), মো. সুমন (২২), মনির উদ্দিন ছোটন (২৭) ও আরাফাত (২১)।
জানা গেছে, ইটভাটায় অভিযান চালাতে যাচ্ছিলেন ঢাকা থেকে আসা পরিবেশ অধিদপ্তরের বিশেষ টিমের সমন্বিত ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও র্যাবের যৌথ বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযানে যাচ্ছিল। এ সময় উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের বাদশারটেক এলাকায় বাধার সম্মুখীন হয়ে সংঘর্ষ হয়।
জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তর ও যৌথ বাহিনী চকরিয়া ও লামায় সীমান্তবর্তী ফাইতং এলাকায় অবৈধ ইটভাটায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছে—এমন খবর পান ইটভাটার মালিকেরা। এরপর ফাইতংয়ের প্রবেশমুখ কাকারার বাদশারটেক এলাকায় সড়কে অবরোধ করেন ভাটার শ্রমিকেরা। পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম বাদশারটেক পৌঁছালে কয়েক শ ইটভাটার শ্রমিক সড়কে শুয়ে পড়েন।
ওই সড়কের বিভিন্ন স্থানে ইট ও গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করে। তখন ইটভাটার শ্রমিকদের সঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিমের সদস্যদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন। পরে বেলা ১টার দিকে পরিবেশ অধিদপ্তর ও যৌথ বাহিনী অবৈধ ইটভাটায় অভিযান না চালিয়ে ফিরে যায়।
ইটভাটার চারজন মালিক ও পরিচালক বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কার্যক্রম শুরু করেছি। প্রশাসন থেকে অনুমতি নিতে গিয়েছিলাম, কিন্তু অনুমতি দেয়নি। একেকটি ইটভাটায় কোটি টাকার ওপর বিনিয়োগ করেছি। এখন অভিযান চালালে আমাদের পথে বসতে হবে।’
লামার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘ফাইতং এলাকায় অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চলাকালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। হামলার ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করে চকরিয়া থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তর চকরিয়া থানায় মামলা করবে।’
চকরিয়ার থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘লামার ফাইতং এলাকায় অভিযানে যাওয়ার পথে কাকারার বাদশারটেক এলাকায় সংঘটিত ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় লিখিত এজাহার পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
চকরিয়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রেজাউল করিম বলেন, ‘জমিরের পরিবারের নিজস্ব ইটভাটা রয়েছে বলে শুনেছি। সেখানে পরিবেশ অধিদপ্তরের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী অভিযানে গেলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় যৌথ বাহিনী তাঁকে আটক করেছে।’
গত রোববার লামা উপজেলার ফাইতং এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনটি ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেয় প্রশাসন। অভিযান চলাকালে ইটভাটার মালিক ও শ্রমিকেরা প্রশাসনকে বাধা দেন। এ ঘটনায় লামা থানায় ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৪০০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের বান্দরবান জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মোহাম্মদ নুর উদ্দিন।
মামলার এজাহারে নাম উল্লেখ করা আসামিদের মধ্যে রয়েছেন এবি পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা এ বি ওয়াহিদ, এনসিপির চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্ম সমন্বয়কারী এরফানুল হক, মিজবাহ উদ্দিন মিন্টু, মহিউদ্দিন, শওকত ওসমান, মুজিবুল হক চৌধুরী, খাইয়ের উদ্দিন মাস্টার, মিজান, জলিল, আলম মেম্বার ও জহির।