সারি সারি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) বেড, ভেন্টিলেটর, হার্ট মনিটর, ইনফিউশন পাম্প, ডিফিব্রিলেটর, রক্তের গ্যাস বিশ্লেষকসহ নানা ধরনের যন্ত্রপাতি। এর সঙ্গে রয়েছে অক্সিজেন থেরাপি মেশিন, ফিডিং টিউব, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন রেফ্রিজারেটরসহ আইসিইউ পরিচালনার আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি। এর সামনেই রয়েছে আধুনিক অভ্যর্থনাকক্ষ, চিকিৎসক ও সেবিকাকক্ষ। বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের ৭ম তলায় থাকা আইসিইউর দৃশ্য এটি। তবে কোটি টাকা মূল্যের এসব মেশিনারিজ ও শয্যা থাকলেও এক বছর ধরে কোনো মুমূর্ষু রোগী এই আইসিইউর সেবা পায়নি। প্রায় ২০ লাখ মানুষের এই জেলার একমাত্র আইসিইউতে সেবা চালু না থাকায় মুমূর্ষু রোগীদের যেতে হয় খুলনাসহ বড় শহরে। যার ফলে রোগীদের ভোগান্তি ও ব্যয় দুটোই বেড়ে যায়। অনেক সময় টাকার অভাবে রোগীকে খুলনা নিতে পারেন না দরিদ্র স্বজনেরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, করোনাকালে ২০২১ সালের ২৩ এপ্রিল বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে তিনটি শয্যার মাধ্যমে আইসিইউ সেবা চালু করা হয়। পরবর্তীকালে বিভিন্ন সময় আরও ৭টি শয্যা যুক্ত করে ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর মোট ১০ শয্যার আইসিইউ উদ্বোধন করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আইসিইউ চালু ছিল। প্রকল্প শেষ হওয়ায় জনবলও উঠিয়ে নেয় মন্ত্রণালয়। আইসিইউ ব্যবস্থাপনায় দক্ষ জনবল বরাদ্দ না থাকায় আইসিইউটি চালু করা যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত পড়ে থাকায় মূল্যবান এসব যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। চালু থাকা অবস্থায় বেশির ভাগ সময় ১০টি শয্যাই পূর্ণ থাকত বলে জানান নার্স ও সহায়ক কর্মীরা।
রক্তদাতা সংগঠন ব্লাড ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম যাদু বলেন, ‘এখানে অনেকে আইসিইউ সাপোর্ট না পেয়ে জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে বাধ্য হচ্ছেন খুলনা দৌড়াতে। আর যাঁরা গরিব, তাঁরা নিতে পারছেন না আইসিইউর সেবা। অবিলম্বে এই আইসিইউ সেবা চালুর জোর দাবি জানাই।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), বাগেরহাটের সাধারণ সম্পাদক এস কে এ হাসিব বলেন, ‘যাবতীয় যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও সদর হাসপাতালে আইসিইউ সেবা বন্ধ রয়েছে। কর্তৃপক্ষ যদি উদ্যোগী হয়ে এই আইসিইউ চালু করে, তাহলে আমরা বাগেরহাটবাসী এই সুবিধা পেতে পারি। এটি চালু না থাকার কারণে আমরা আইসিইউ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।’
হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজর ও আইসিইউতে দায়িত্ব পালন করা নার্স বাসন্তী নারী দাস বলেন, এখানে অনেক দিন যাবৎ আইসিইউ অচল অবস্থায় আছে। ডাক্তাররা বাধ্য হয়ে রোগীকে উন্নত সেবার জন্য রেফার্ড করে খুলনায় পাঠান। ১০ বেডের এই আইসিইউ যখন সচল ছিল, তখন বেশির ভাগ সময় পরিপূর্ণ থাকত।’
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার বলেন, ‘কোভিড-১৯ নামের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে আইসিইউ সেবাটি চলত। প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আইসিইউ সেবা বন্ধ রয়েছে। দক্ষ জনবল না থাকায় আমরা আইসিইউ সেবা দিতে পারছি না।’ তিনি বলেন, ‘বাগেরহাটে কোথাও আইসিইউ সেবার ব্যবস্থা নেই। তাই জেলার ২০ লাখ মানুষের জন্য সদর হাসপাতালে আইসিইউ সেবা থাকা উচিত বলে আমি মনে করি।’ তিনি আরও বলেন, ১০ শয্যার আইসিইউ চালাতে তিনজন কনসালট্যান্ট, চারজন মেডিকেল অফিসার, ১২ জন নার্স ও ১৬ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী প্রয়োজন।