‘ফাতেমা আমাদের কলিজার টুকরা ছিল। ছোটবেলা থেকে ঢাকায় থাকত, মায়ের সঙ্গে। আমাদের সবার ইচ্ছে ছিল, বড় হয়ে সে চিকিৎসক হবে। সব আশা-স্বপ্ন আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল।’ এভাবেই বিলাপ করছিলেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তে নিহত ফাতেমা আক্তার আনিশার (৯) চাচি মুক্তা বেগম। অদূরেই ভাগনে ওসমানকে কোলে নিয়ে আনিশা আনিশা (ফাতেমার ডাকনাম) বলে কেঁদে চলেছেন মামা লিওন মীর।
বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার কলাতলা ইউনিয়নের কুনিয়া গ্রামে ফাতেমার দাদার বাড়িতে এখন স্বজনদের কান্নার রোল। আজ মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে রাজধানী থেকে সেখানে ফাতেমার লাশ এসেছে।
ফাতেমা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়িতে ফিরেছেন কুয়েতপ্রবাসী বাবা বনি আমিন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে ফাতেমা ছিল সবার বড়। মায়ের সঙ্গে তারা ঢাকায় থাকত।
আজ সকালে গ্রামের বাড়িতে ফাতেমার লাশ আনা হলে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পার্শ্ববর্তী কুনিয়া কওমি মাদ্রাসা মাঠে জানাজা হয় ফাতেমার। জানাজা শেষে পারিবারিক করবস্থানে তাকে দাফন করা হয়। ছোট ফাতেমার জানাজায় তার স্বজনসহ স্থানীয় হাজারো মানুষ অংশ নেন।
একমাত্র মেয়ে ও প্রথম সন্তানকে হারানোর শোকে নির্বাক হয়ে পড়েছেন বাবা-মা। দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর থেকে তাঁরা ঘরের ভেতর আলাদা কক্ষে রয়েছেন। কারও সঙ্গে কথা বলছেন না তাঁরা। ছোট দুই ছেলেকে সামলাচ্ছেন স্বজনেরা।
ফাতেমার বাবার মামাতো ভাই সৈয়দ নোমান হোসেন বলেন, ‘দুর্ঘটনার সময় আমি মাইলস্টোন স্কুলের কাছেই ছিলাম। খবর শুনে আমিসহ অনেকেই উদ্ধারকাজে অংশ নিই। আমি তখনো জানতাম না, আমার ভাতিজি ওখানে নিহত হয়েছে। পরে হাসপাতাল থেকে তার লাশ শনাক্ত করি। সকালে গ্রামে এনে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।’
ফাতেমার ফুফু ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘ফাতেমা তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। দুর্ঘটনার পর আমরা প্রথমে তাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না, পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ওকে খুঁজে পাই। এরপর ওখান থেকে আমরা রাত ৩টার দিকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সবার স্বপ্ন ছিল ফাতেমা বড় হয়ে ডাক্তার হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। ও খুব শান্তশিষ্ট একটা মেয়ে। আমাদের সবার চোখের মণি। ফাতেমা সবার বড়, ওর ছোট দুটো ভাই আছে। ও পড়াশোনায় ভালো ছিল। একবার বললেই সবকিছু মনে থাকত। কালকে ওর স্কুলটা ছুটি হয়ে গেছিল, কিন্তু ও কোচিংয়ের জন্য ওয়েট করছিল। আজকে সে লাশ হয়ে বাড়িতে এল। আমরা আসলে কী যে বলব, বুঝতে পারছি না। আমাদের বলার আর ভাষা নেই।’