হোম > বিশ্লেষণ

সিনেটের নিয়ন্ত্রণ ডেমোক্র্যাটরা না পেলে যা যা হতে পারত

নেভাদায় ক্যাথরিন কর্টেজ মাস্তোর জয়ের মাধ্যমে সিনেটের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের ১০০ আসনের মধ্যে ডোমোক্র্যাটরা ৫০টি পেয়েছে, আর রিপাবলিকানরা ৪৯টি। কিন্তু ডোমোক্র্যাটরা সিনেটের নিয়ন্ত্রণ হারাতে কি হতে পারত?

মধ্যবর্তী এই নির্বাচনে সিনেটের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকানদের হাতে গেলে তাঁরা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের যে কোনো সিদ্ধান্ত আটকে দিতে পারতেন। তখন বাইডেন তার মেয়াদের বাকি দুই বছরে পছন্দমতো ফেডারেল আদালত ও প্রশাসনে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ হারাতেন। এখন দেশটির সুপ্রিম কোর্টে বিচারকের আসন ফাঁকা হলে পছন্দের মানুষকে নিয়োগ দিতে ডেমোক্র্যাটদের সামনে বাধা থাকবে না। 

এখন সিনেটের বাকি আসন জর্জিয়ায় রিপাবলিকানরা জয়ী হলে দুই দলের আসন সংখ্যা সমান হবে। তবু সিনেটের নিয়ন্ত্রণ ডেমোক্র্যাটদেরই থাকবে। সিনেটে কোনো বিষয়ে ভোটাভুটিতে দুই পক্ষ সমান হলে দেশটির ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হারিস ক্ষমতাবলে নিজের ভোট প্রয়োগ করতে পারেন। আর তিনি যেহেতু ডোমোক্র্যাট দলের ‘থেকেই নির্বাচিত তাই। তাঁর ভোট কোন দিকে যাবে সেটা স্পষ্ট।’

তবে বাইডেন বলেছেন, ডেমোক্র্যাটদের ৫১ আসন পাওয়াই দরকার। কারণ এই আসন সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করেব এবং ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচেন ডেমোক্র্যাটদের ঝুঁকিমুক্ত রাখতে সাহায্য করবে।

তবে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষে বা সিনেটে ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণ থাকলেও বাইডেনের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস। এখানে রিপাবলিকানদের সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকতে পারে। তবে সবগুলো আসনের ফলাফল প্রকাশিত না হওয়ায় বিষয়টি নিশ্চিত নয় এখনো। 

তবে নিম্নকক্ষে রিপাবলিকান পার্টি এগিয়ে থাকলে বাইডেন আইনসভায় তাঁর এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হতে পারেন। কংগ্রেসে তাঁর কার্যক্রমের ওপর রিপাবলিকানদের খবরদারি আরও বাড়তে পারে। তবে বিষয়টি তাঁর জন্য শাপে বর হয়েও দেখা দিতে পারে। তবে সেটি কেবল তখনই সম্ভব, যখন তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ‘অভ্যন্তরীণ কোন্দলে’ কার্যকরভাবে কংগ্রেসের উভয় কক্ষে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে না পারে। 

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্পূর্ণ ফলাফল এখনো প্রকাশিত হয়নি। তবে এরই মধ্যে ডেমোক্র্যাট পার্টিতে বাইডেনের অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়েছে। তাঁর উপদেষ্টারা এখন দ্বিতীয় মেয়াদে বাইডেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ার ইচ্ছার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলছেন। দলের ভেতরে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিরাও তাঁর প্রশংসা করছেন। 

যেমন ম্যাসাচুসেটসের সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন বলেছেন, ‘এই জয় বাইডেনের। প্রেসিডেন্টের নেতৃত্ব আমাদের এমন এক অবস্থানে রেখেছে—যেখানে ডেমোক্র্যাটরা কিসের জন্য লড়াই করে এবং আমরা জনগণকে কী দিতে চাই সেই বিষয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করে।’ 

বিপরীতে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগামী নির্বাচনে লড়ার বিষয়টি আরও ফিকে হয়ে উঠেছে। তা আরও ফিকে হতে থাকতে পারে বলেই ধারণা। এরই মধ্যে রিপাবলিকান পার্টিতেই তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট হতে শুরু করেছে। নেভাদায় ডেমোক্র্যাটরা জয়ের পরই দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা ট্রাম্পের সমালোচনায় সরব হয়েছেন। এটা তাঁর ভাগ্য নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে। তবে এখন যারা সমালোচনায় সরব, তাঁরা অতীতেও ট্রাম্পের সমালোচনা করেই অভ্যস্ত।

এদেরই একজন সিনেটর বিল ক্যাসিডি প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ট্রাম্পের অভিশংসন প্রস্তাবেও সই করেছিলেন বিল ক্যাসিডি। তিনি বলেন, মধ্যবর্তী নির্বাচনে ট্রাম্প সমর্থিত প্রার্থীরা ‘খুবই বাজে ফলাফল দেখিয়েছেন।’

এমনই আরেকজন মেরিল্যান্ডের গভর্নর ল্যারি হোগান। তিনিও ট্রাম্পকে পছন্দ করেন না। তবে এটিও বড় বাধা নয়। কারণ ট্রাম্পের সমালোচকদের আসল পরীক্ষা শুরু হবে যদি ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের মিত্ররা তাঁকে সমর্থন দেওয়া অব্যাহত রাখেন। 

সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলো বলছে, ট্রাম্পের মিত্ররা কংগ্রেসের বিভিন্ন আসনে থাকা রিপাবলিকান নেতাদের জনসমক্ষে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইচ্ছাকে সমর্থনের জন্য চাপ দিচ্ছেন। এরই মধ্যে নিউইয়র্কের কংগ্রেসওম্যান এলিস স্টেফানিক ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানান। দলটির আরও অনেকেই স্টেফানিকের পথ অনুসরণ করেছেন। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর পরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী রিপাবলিকান রাজনীতিবিদরা এখনো সাবেক প্রেসিডেন্টের ওপর ভর করেই যে সাফল্যের পথ দেখার আশা করবেন, তার ইঙ্গিত স্পষ্ট।

সব মিলিয়ে, মধ্যবর্তী নির্বাচনের সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক চালচিত্র অনেকটাই বদলে গেছে। ডেমোক্র্যাটরা নিজেদের অবস্থান নিয়ে আরও নিরাপদ বোধ করছেন। অন্যদিকে রিপাবলিকানরা হাউসে ভারসাম্য পুনরুদ্ধারের লড়াই করে যাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির অনিশ্চিত গতিপ্রকৃতির পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান পরিস্থিত বদলাতে খুব বেশি সময় লাগবে না।

বিবিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

ডার্ক ফ্লিট: নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যেভাবে চলে ইরান ও ভেনেজুয়েলার তেল পাচার

এআই চাকরি কেড়ে নিচ্ছে আমেরিকায়, কিন্তু নিয়োগ বাড়াচ্ছে ভারতে—কীভাবে

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ না সম্ভাবনা

শত বছর আগে জাপানের কাছে হারের বদলা চান সি চিন পিং!

কোন দেশে সম্পদ ও আয়ের বৈষম্য সর্বাধিক, বাংলাদেশের চিত্র কেমন

যুদ্ধক্ষেত্রে কতটা দক্ষ ইতালির জঙ্গি বিমান ইউরোফাইটার টাইফুন

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘাত থামেনি, ট্রাম্প ‘থামিয়েছেন’ দাবি করা অন্য যুদ্ধগুলোর কী অবস্থা

তুরস্কের গোয়েন্দা সহায়তায় যেভাবে ‘দামেস্কের আমির’ হলেন আল–শারা

রাশিয়ার জব্দ সম্পদ ইউক্রেনকে দেওয়ার প্রশ্নে যে সংকট সামনে এল

নেতানিয়াহু নিউইয়র্কে এলেই গ্রেপ্তার করতে চান মামদানি, কিন্তু কীভাবে