হোম > নারী

জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস: চলচ্চিত্রে অন্তরালের নারীরা

নাজমুল হক নাঈম, ঢাকা

আজ ৩ এপ্রিল, জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালের এই দিনে তখনকার পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (এফডিসি) গঠনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এই দিনকে স্মরণ করে ২০১২ সাল থেকে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদ্‌যাপন করা হয়।

পুরোনো কথা
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অভিনয়ের পাশাপাশি নারীরা সাফল্য পেয়েছিলেন প্রযোজনায়ও। এ ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। যত দূর জানা যায়, একেবারে শুরুতে স্টার ফিল্ম করপোরেশনের ৬০ প্রযোজকের মধ্যে ৩ জন ছিলেন নারী। তাঁদের হাত ধরে সুমিতা দেবী, মালতী দে, সুচন্দা, কুমকুম রহমান, মাহবুবা রহমান, সুলতানা জামান, নীলুফার খায়ের, জোহরা কাজী একের পর এক ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিয়েছিলেন। অভিনয়ে সাফল্য লাভের পর প্রযোজকের খাতায় নাম লিখিয়েছিলেন সুজাতা, ববিতা, কবরী, শাবানার মতো জনপ্রিয় অভিনেত্রীরা।

নারী প্রযোজকেরা কখনো একা আবার কখনো সহশিল্পী কিংবা সহকর্মীদের সঙ্গে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিলেন। অভিনেত্রী সুজাতা ছিলেন এ ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য। ১৯৭৬ সালে প্রযোজনায় আসেন তিনি। সুজাতা প্রোডাকশনসের ব্যানারে তিনি ‘অর্পণ’ নামে একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছিলেন। এরপর নির্মিত হয় ‘প্রতিনিধি’ নামের একটি চলচ্চিত্র। সুজাতা পরে আজিমের সঙ্গে ‘এস এ ফিল্মস’ ও ‘সুফল কথাচিত্র’ নামের আরও দুটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চালু করেছিলেন। এ তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে নির্মিত হয়েছিল ‘চেনা-অচেনা’, ‘টাকার খেলা’, ‘রূপবানের রূপকথা’, ‘বদলা’, ‘রং-বেরং’, ‘এখানে আকাশ নীল’ ইত্যাদি চলচ্চিত্র।

শ্রীমতী প্রোডাকশন নামে নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিলেন অভিনেত্রী কবরী। কিন্তু প্রথম চলচ্চিত্র ‘শীত-বসন্ত’ সেন্সরে জমা দেওয়ার পর আপত্তির মুখে প্রতিষ্ঠানের নাম বদলে ফেলতে বাধ্য হন তিনি। বরেণ্য অভিনেত্রী ববিতার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল ববিতা মুভিজ। ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’ চলচ্চিত্রটি তৈরি হয়েছিল এই প্রতিষ্ঠান থেকে। একটানা ২২ বছর অভিনয়ের পর চলচ্চিত্র প্রযোজনায় নাম লিখিয়েছিলেন শাবানা। স্বামী ওয়াহিদ সাদিককে সঙ্গী করে গড়ে তোলেন এসএস প্রোডাকশন হাউস। ২৫টির বেশি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছিলেন তিনি। 

বর্তমান প্রেক্ষাপট
চলচ্চিত্রশিল্পের বর্তমান প্রেক্ষাপট কী, সেটা সবাই কমবেশি আমরা জানি। প্রযোজকদের সংখ্যা দিন দিন কমছে তো বটেই, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পুরুষতান্ত্রিক ধ্যানধারণার প্রভাব। এসব নিয়ে কথা হয় নির্মাতা ও প্রযোজক নার্গিস আক্তারের সঙ্গে। ২০০০ সাল থেকে তিনি প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত। তিনি জানান, নারী প্রযোজক হিসেবে এ পর্যন্ত কোনো ধরনের সংকটের মুখে পড়তে হয়নি তাঁকে। যেভাবে কাজ করতে চেয়েছেন, নিশ্চিন্তে সেটা করেছেন। নার্গিস আক্তার বলেন, ‘তবে আমার মনে হয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীদের বাদ দিয়ে পুরুষ প্রযোজকেরা বেশি প্রাধান্য বিস্তার করেন।’

নিজের বেশির ভাগ চলচ্চিত্র নিজেই প্রযোজনা করেছেন নার্গিস আক্তার। প্রযোজক হিসেবে না হলেও পরিচালক হিসেবে আক্ষেপ আছে তাঁর। তিনি বলেন, ‘প্রযোজকেরা সাধারণত নারী নির্মাতাকে দিয়ে সিনেমা নির্মাণ করতে চান না। তাঁরা ধরে নেন, কোনো নারী এই কাজ করলে ধীরগতিতে হবে। কারণ নারী দুর্বল, মেধা কম ইত্যাদি। ফলে আমাদের সেই সুযোগটা দেওয়া হয় না।’

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের সিনেমার প্রথম সারির অনেক নায়িকা প্রযোজনায় এসেছিলেন। তবে তাঁদের মধ্যে কয়েকজন ঘোষণা দিয়েই আড়ালে চলে গেছেন। অনেকে আবার দু-একটা সিনেমা তৈরির পর পিছু হটেছেন।

অভিনেত্রী জয়া আহসানের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘সি তে সিনেমা’। সেই প্রতিষ্ঠান থেকে তৈরি হয়েছে ‘দেবী’। আর মুক্তির অপেক্ষায় আছে ‘জয়া আর শারমিন’ নামের একটি চলচ্চিত্র। প্রযোজনা বিষয়ে জয়া বলেন, ‘ইন্ডাস্ট্রিতে একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর প্রযোজনায় আসা যেতেই পারে। কারণ একটা সময়ে এখানকার সবকিছু হাতের রেখার মতো পরিষ্কার হয়ে যায়। যদি কাজটা তারা ভালোভাবে করে, ফাঁকফোকরগুলো পূরণ করতে পারে, তাহলে এখানেও ভালো কিছু করা সম্ভব।...’

প্রযোজক হিসেবে কাজ করছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’, ‘আ বার্নিং কোয়েশ্চেন’ চলচ্চিত্র দুটির প্রযোজক হিসেবে ছিলেন তিনি। এগুলো ছাড়া বেশ কয়েকটি ওয়েব সিরিজও প্রযোজনা করেছেন তিনি। তিশা বলেন, ‘প্রযোজক হিসেবে ভালো কনটেন্ট নির্মাণ করতে চাই।’

চলচ্চিত্রে অন্তরালের নারীরা আবার সক্রিয় হবেন কি না, সেটা সময়ই বলবে।

দিলরুবা হক মিলি: বনরক্ষী এক নারীর গল্প

অতীতের আলো, বর্তমানের অন্ধকার

জন্মনিবন্ধন করতে বাবার এনআইডি বা তথ্য বাধ্যতামূলক নয়

নারী আন্তর্জাতিক পেশাদার বক্সিংয়ে হিজাব, নিরাপত্তা নাকি প্রথা

পরিবেশ নিয়ে সরব দুই অভিনেত্রী

বিস্মৃত ছবিতে সামনে এল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে নারীদের নেতৃত্ব

‘সচেতনতার অভাব ও সামাজিক কাঠামোর বৈষম্য নারীদের এগিয়ে যেতে বাধা দিচ্ছে’

‘নারীর সাফল্য অনেক পুরুষকে শঙ্কিত করে, এই শঙ্কাই সহিংসতা বাড়িয়ে দিচ্ছে’

রীমার ‘আয়নাবিবির গহনা’

শ্বশুর-শাশুড়ি বা অন্য কেউ স্বামীর হয়ে তালাক দিতে পারেন না