হোম > নারী

সাগরিকার সুই-সুতার ভুবন

নদীর দুই পাশে বাড়ি, বাড়ির ওপর ফুলের গাছ। নদী থেকে দূরে বাঁশবনের ওপর সূর্য উঠছে। নদীতে বাঁধা নৌকা, ফুটে আছে পদ্ম ফুল। এর পাশেই ভাসছে সাদা পাতিহাঁস। হঠাৎ দেখলে কোনো দক্ষ শিল্পীর আঁকা গ্রামবাংলার দৃশ্য বলে ভুল হতে পারে। ভালো করে দেখলে বোঝা যাবে, রং-তুলি নয়—এ দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কাপড়ের ওপর সুই ও সুতার নিপুণ ব্যবহারে। সুই-সুতায় এই দারুণ দৃশ্যকল্প যিনি তৈরি করেছেন, তাঁর নাম সাগরিকা খাতুন।

তিনি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের সুলাইমান দফাদারের মেয়ে ছোটবেলায় ইচ্ছা ছিল চিত্রশিল্পী হওয়ার। রং-তুলি দিয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে ছবি আঁকার। সে ইচ্ছা পূরণ হয়নি সাগরিকার। তবে রং-তুলিতে ক্যানভাসে না হলেও তিনি চিত্রই ফুটিয়ে তোলেন মনের মাধুরী মিশিয়ে। তবে তা সুই-সুতায়। তাঁর ক্যানভাস পোশাক ও শোভাবর্ধনকারী আসবাব। এই সুই-সুতার কাজ বা সূচিশিল্পই তাঁকে এনে দিয়েছে জীবিকার সন্ধান। বনে গেছেন উদ্যোক্তা। দেখা পেয়েছেন সাফল্যের।

এসএসসি পরীক্ষার দুই মাস আগে পারিবারিকভাবে সাগরিকার বিয়ে হয়। পরে এইচএসসি পাস করেন তিনি। এরপর আর পড়াশোনা হয়নি। দাম্পত্যজীবনে এক কন্যাসন্তানের জননী। কিন্তু স্বামী বেকার থাকায় সংসারের জোয়াল কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে সাগরিকাকে। সে দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই তিনি সূচিশিল্পী হয়ে ওঠেন।

সাগরিকা সুই-সুতায় ফুটিয়ে তোলেন গ্রামবাংলার দৃশ্য, করেন হোপ আর্ট। পাশাপাশি আছে হ্যান্ড পেইন্ট ও ব্লকের কাজ। তবে এসব কাজেও তাঁর উপজীব্য গ্রামবাংলার দৃশ্য। ২০২০ সালে করোনাকালে পৃথিবী যখন থমকে যায়, সাগরিকা তখন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী। শখের বশে শেখা হাতের কাজ করতে শুরু করেন তিনি। সে সময় মাত্র এক হাজার টাকা নিয়ে শুরু করেন সুই-সুতা, হ্যান্ড পেইন্ট ও ব্লকের ডিজাইনের কাজ। সে কাজ আর বন্ধ করা হয়নি তাঁর। ধীরে ধীরে বেড়েছে কাজের পরিধি। একপর্যায়ে এসে সেটিকেই বেছে নেন পেশা হিসেবে। কামিজ, নকশিকাঁথা, শাড়ি, বেডশিট, ওয়ালম্যাট, টেবিল ম্যাট, বেবি সেট, টেবিল রানার, চাদর, পাঞ্জাবি ইত্যাদিতে তিনি সুই-সুতা আর ব্লক ও হ্যান্ড পেইন্টে তৈরি করতে থাকেন দারুণ সব নকশা।

সাগরিকার ফেসবুক পেজের নাম ‘জলছাপ’। এই পেজের নকশি মসলিন শাড়ি ও পাঞ্জাবি সবার নজর কাড়ে। একসময় তিনি এগুলো বিভিন্ন দামে বিক্রি শুরু করেন। এই পেজ থেকে তিনি ১০ হাজার টাকা দামেও শাড়ি বিক্রি করেন। নিজের পেজের বাইরে ঝিকরগাছার একটি নারী উদ্যোক্তা সংগঠনের মাধ্যমে অনলাইন ও অফলাইনে পণ্য বিক্রি করতে থাকেন। এখন সাগরিকার সঙ্গে কাজ করেন ২০ জন নারী। বাড়িতে বসেই তিনি এখন প্রতি মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা আয় করছেন।

সাগরিকা বলেন, ‘সুই-সুতায় শিল্পকর্মে মানুষ যেমন প্রকৃতির রূপ দেখতে পান, তেমনি আমিও এ কাজে জীবিকার সন্ধান পেয়েছি। গত বছর অসুস্থতার জন্য আমার শরীরে একটি অপারেশন করতে হয়েছিল। সেটা চিকিৎসার জন্য কারও কাছে অর্থের জন্য দ্বারস্থ হতে হয়নি। এটা আমার কাজের প্রতি আরও আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছে।’

রোকেয়াকে ‘মুরতাদ’ বলা রাবি শিক্ষকের অপসারণ চায় মহিলা পরিষদ

ল্যানসেটের গবেষণা: শৈশবে ১০০ কোটি মানুষ যৌন সহিংসতার শিকার

মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় জীবনের গল্প

যৌতুক দাবি ও গ্রহণ করা এবং যৌতুকের জন্য চাপ দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ

মোটরবাইকপ্রেমী নারীদের যাত্রা

কবি বাবার উদ্ভাবক কন্যা

জুলাই অভ্যুত্থানে বেগম রোকেয়া ছিলেন প্রেরণা হয়ে: নাহিদ ইসলাম

যৌনকর্মীদের মানবাধিকার সুরক্ষায় রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব নিশ্চিতের দাবি সংহতির

দিলরুবা হক মিলি: বনরক্ষী এক নারীর গল্প

অতীতের আলো, বর্তমানের অন্ধকার