হোম > ল–র–ব–য–হ

রহস্যময় ছায়ামূর্তি আর লম্বা কালো হাত থেকে সাবধান 

ইশতিয়াক হাসান

বাড়িটির যে নাম তার বাংলা করলে দাঁড়ায় হাজার দরজা। ইন্দোনেশিয়ার এই বাড়িটি সত্যি অনেক দরজা থাকলেও এটি বেশি পরিচিত এর অতীত ইতিহাস আর একে ঘিরে ঘটা নানা ভৌতিক কাণ্ড–কীর্তির জন্য।

ইন্দোনেশিয়ায় সে সময় কলোনি স্থাপন করা ডাচরা বিশ শতকের গোড়ার দিকে লাওয়াং সিও নামে পরিচিত বাড়িটি তৈরি করে জাভার সিমারাং শহরে। ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়ান রেল কোম্পানির সদর দপ্তর করা হয় একে। পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানিরা একে ডিটেনশন ক্যাম্প বা বন্দী শিবিরে রূপান্তর করেন। যুদ্ধের সময় ভয়ংকর কিছু ইন্টারোগেশন বা জিজ্ঞাসাবাদ, নির্যাতন এবং মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা ঘটে দালানটির চার দেয়ালের মধ্যে। স্থানীয়দের বিশ্বাস এ ঘটনাগুলোর ফলাফল হিসেবেই এই দালানটিকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের ভুতুড়ে আর অতিপ্রাকৃত ঘটনার বিস্তার শুরু হয়। এমনকি এখনো এখানে অস্বাভাবিক শক্তি বা অশরীরীর উপস্থিতির অভিযোগ করেন পর্যটকেরা।

শুরুতে ভাবা হয়েছিল এর অতীতের কারণে পর্যটকেরা এখানে যেতে সাহস করবেন না। কিন্তু এখন গড়ে প্রতিদিন অন্তত ১ হাজার মানুষ হাজির হন ভুতুড়ে বাড়িটিতে। যেসব পর্যটক এখন পরিত্যক্ত ভবনটিতে যান, বেশিরভাগের উদ্দেশ থাকে একে ঘিরে যেসব রহস্যময় ও অতিপ্রাকৃত ঘটনা ঘটছে তার সত্যতা যাচাই। কিংবা এ রকম কোনো অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়ার আশায়ও যান অনেকেই। 

১৯০৩–০৪ সালের দিকে লাওয়াং সিওর মূল দালান অর্থাৎ বিল্ডিং এ এর কাজ শুরু হয়। এল আকারের দালানটির দু–পাশে চার তলা দুটি টাওয়ার আছে। এটার কাজ ১৯০৭ সালে শেষ হলেও বিল্ডিং বি তৈরির কাজ শেষ হয় ১৯১৯ সালে। এই দেরির কারণ সম্ভবত দালানটির বিশালাকায় বেসমেন্টটি তৈরিতে বাড়তি সময় লাগা।  
দালানটির বিভিন্ন অংশ আর কামরাকে ঘিরেই ভুতুড়ে ঘটনা ঘটার কথা বলেন পর্যটক ও আশপাশের এলাকার মানুষেরা। তবে ভবন বি–এর বেসমেন্ট ঘিরেই বেশির ভাগ অতিপ্রাকৃত ঘটনার জন্ম। দালানটির মধ্যে একটি কুয়া আছে। সেখান থেকে মাঝে মাঝেই ভয়ার্ত ও যন্ত্রণাকাতর চিৎকার শোনা যায়। যদিও কুয়ার মুখ বহু বছর ধরেই বন্ধ। বুকে ভর দিয়ে ছায়ামূর্তিটি চলে বলে দাবি করেন পর্যটকেরা। 

ঘোস্ট হল নামের একটি হলওয়ে আছে। আপাতদৃষ্টিতে এখানে সবকিছু স্বাভাবিক মনে হবে আপনার। তবে এখানে বেশ কিছুটা সময় অপেক্ষা করলে এবং নিঃশব্দে উবু হয়ে থাকলে মানব আকারের একটি ছায়াময় কাঠামো দেখবেন। বুকে ভর দিয়ে যেটি এগিয়ে আসছে।

এখানে বন্দীদের আটকে রাখা হতো যেসব কামরায় অর্থাৎ প্রিজন রুমে গেলে অদ্ভুত, রহস্যময় একটি গন্ধ নাকে এসে লাগবে। একপর্যায়ে আবিষ্কার করবেন এটার রক্তের গন্ধের মিল আছে। 

ভবনটির ভেতরে বড় একটি গেট আছে। সেখানেও অতিপ্রাকৃত কিছুর উপস্থিতির গল্প শোনা যায়। অনেকেই লম্বা, দুটো কালো হাত দেখে ঘাবড়ে যাওয়ার কথা বলেন। কেউ কেউ আবার সাদা পোষক পড়া ভাঙা মুখের একটি কাঠামো দেখে চমকে ওঠেন। কেউ আবার সাদা একটি ছায়াকে গেট বা দেয়াল ফুঁড়ে চলে যেতে দেখেন।

ডাচ একজন নারীর ভূত দেখার কথা বলেন অনেকেই। বলা হয় ভবনটিতে আত্মহত্যা করেছিলেন এই নারী। যদ্দুর জানা যায় বিশ্বযুদ্ধের সময় অধিকাংশ নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল বাড়িটির বেসমেন্ট বা পাতাল কুঠুরিতে। সেখানে গেলে অস্বস্তিতে ভোগেন অনেকেই। কেউ কেউ মাথা ছাড়া একটি ছায়ামূর্তি দেখার দাবিও করেন।

লাওয়াং সিওর সঙ্গে একটি কিংবদন্তিরও যোগ আছে। কুন্তিলানাক বা পন্তিয়ানাক নামে পরিচিত অশরীরীদের একটি হানা দেওয়ার খবর পাওয়া যায় এখানকার দালান কিংবা দালানগুলোকে ঘিরে। কিংবদন্তি অনুসারে, কম বয়সে মারা যাওয়ার পর ভ্যাম্পায়ারে পরিণত হওয়া এক নারী এটি। মুখ ফ্যাকাশে, চুল লম্বা। লাল চোখের এই অশরীরীদের শরীরে থাকে রক্তে ভেজা সাদা এক পোশাক। দাঁত সুচালো। গুজব আছে, এরা নিজেদের সুন্দর নারীতে রূপান্তরিত করে তরুণদের ফাঁদে ফেলে।

প্রকৃতপক্ষে দরজার গর্ত দালানটিতে আছে ৪২৯টি, তবে দরজার সংখ্যা বা কপাট আছে ১২০০–র বেশি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক সঙ্গে দুটি কিংবা চারটি দরজা আছে।

তবে শুধু যে ভুতুড়ে ঘটনায় যাদের আগ্রহ, অভিজ্ঞতা নিতে তারাই এই দালানে আসেন তা নয়, বিয়ের সময় ঘনিয়ে আসা তরুণ–তরুণী জুটিরাও আসেন। তাঁরা আসেন দালানটিতে ছবি তুলতে।

ভুতুড়ে বাড়িটি নিয়ে ছবিও তৈরি হয়েছে। ২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটির নাম, ‘লাওয়াং সিও, ডেনডাম কুন্তিলানাক’। চলচ্চিত্রটিতে দেখা যায় জাকার্তার একটি হাই স্কুলের কিছু শিক্ষার্থী লাওয়াং সিওতে আসে। কিন্তু এখানে তারা আটকা পড়ে যায়। শুধু তাই নয় এক ডাচ নারীর অশরীরী, শিকলবন্দী এক লোকের প্রেতাত্মা এবং অবশ্যই কুন্তিুলানাক থেকে বাঁচতে লড়াই করতে হয় তাদের।

কাজেই পাঠক ইন্দোনেশিয়ায় গেলে জাভার সিমারাং শহরের এই ভুতুড়ে দালানে একটি বার ঢুঁ মারতেই পারেন, অবশ্যই আপনি যদি সাহসী হোন কেবলমাত্র তবেই সে পরামর্শ দেব। কারণ কে জানে, ভুতুড়ে বাড়িতে কী ধরনের বিস্ময় অপেক্ষা করছে আপনার জন্য!

সূত্র: ওয়ার্ল্ড প্রেস ডট কম, সিএন ট্রাভেলার ডট কম, দ্য লিটল হাউস অব হররস ডট কম

মদের দোকানে তাণ্ডব, বাথরুমে পাওয়া গেল মাতাল র‍্যাকুন

ভারতে প্রায় কোটি টাকার এক হিরা খুঁজে পেলেন ‘শৈশবের দুই বন্ধু’

লিংকডইনে গার্লফ্রেন্ড চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর যা ঘটল

অফিসে ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়ায় চাকরি হারালেন প্রকৌশলী

ব্যর্থ ব্যবসায়ী ফুড ডেলিভারি করে লাখপতি

বিমানের ডানায় আটকে গেল প্যারাস্যুট, অলৌকিকভাবে বাঁচলেন স্কাইডাইভার

সময়ের আগে অফিসে যাওয়ায় চাকরিচ্যুত নারী

২৩ লাখ টাকার ‘ডিম’ গিলে ফেললেন যুবক, এক সপ্তাহ পর যেভাবে উদ্ধার করল পুলিশ

১৯ হাজার ডলারের ‘ডিম’ গিলে যুবক কারাগারে

জরায়ুহীন হয়ে জন্মেছিলেন, তাঁর হয়ে সন্তান জন্ম দিলেন প্রিয় বন্ধু