জাতীয় দলের ক্যাম্প চলায় বন্ধ আছে ঘরোয়া ফুটবল। তবু দেশের ক্লাবগুলো খবরের শিরোনাম হচ্ছে নেতিবাচক কারণে। ফিফার নিষেধাজ্ঞা আসছে দেশের বড় বড় ক্লাবের বিরুদ্ধে। বসুন্ধরা কিংস, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পর এবার গত পরশু আবাহনী লিমিটেডও পেল খেলোয়াড় নিবন্ধনে নিষেধাজ্ঞা।
এখন পর্যন্ত কেউই সে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পারেনি। লিগ চলমান থাকায় খেলতে অবশ্য কোনো বাধা নেই কারও। তবে নতুন কোনো খেলোয়াড় নিবন্ধন করতে পারবে না কেউ। নিয়মের বেড়াজালের কারণে এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে ফর্টিস থেকে ধারে নেওয়া পা ওমর বাবু, ইসা জালোউ, ওকাফরকে খেলাতে পারেনি বসুন্ধরা কিংস। অথচ বাংলাদেশ ফুটবল লিগে নিজেদের অন্যতম পেশাদার ক্লাব হিসেবে দাবি করে তারা।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্লাবগুলোর অসতর্কতা আর অবহেলায় এমন নিষেধাজ্ঞার পেছনে মূল কারণ। আবার খেলোয়াড়েরাও এজেন্টদের মাধ্যমে ফাঁদ তৈরি করে। অনেক সময় হোয়াটসঅ্যাপের স্ক্রিনশটও ফিফার কাছে অভিযোগ পাঠানোর জন্য যথেষ্ট। আর সেই ফাঁদে পা দিয়ে থাকে ক্লাবগুলোও।
কিংসের প্রথম ধাক্কাটা আসে সাবেক কোচ ভালেরিউ তিতার কাছ থেকে। গত বছর ক্লাবটিকে চ্যালেঞ্জ কাপ ও ফেডারেশন কাপ জিতিয়েছেন তিনি। এরপর তাঁকে এবারের মৌসুমে রাখেনি কিংস। পাওনা পারিশ্রমিক বুঝে না পেয়ে ফিফার কাছে নালিশ করতে কুণ্ঠাবোধ করেননি রোমানিয়ান কোচ। কয়েক সপ্তাহ আগে পারিশ্রমিক বকেয়ার অভিযোগে লিগের মাঝপথে কিংস ছেড়েছেন জাতীয় দলের ডিফেন্ডার তারিক কাজী।
প্রশ্ন উঠছে, ঘরোয়া ফুটবল কি তাহলে কোনোভাবেই নিজেদের পেশাদারি আনতে পারছে না? গত বছর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরই আর্থিক জটিলতায় ঘেরা আছে ক্লাবগুলো। ফুটবলাররাও তাঁদের পারিশ্রমিক কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছেন। আবাহনী যেমন গত মৌসুমের আগে বেশ কয়েকজন বিদেশি ফুটবলারের সঙ্গে চুক্তি করে। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর সেই খেলোয়াড়দের আর লিগে নিবন্ধন করায়নি। বিদেশি ছাড়াই খেলেছে লিগের প্রথম অর্ধ। রিচমন্ড বোয়াকে, কেনেডি আমুটেনিয়া ও মোয়াদ আল খৌলিরা পাওনা না পেয়ে অভিযোগ করেন ফিফার কাছে। প্রায় ৩ কোটি টাকার মতো পাবেন তাঁরা।
আবাহনীর ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রূপু বলেন, ‘আমরা মঙ্গলবার ফিফার সিদ্ধান্ত জেনেছি। তবে ৫ আগস্টের আগে ক্লাবের আগের ব্যবস্থাপনা যে আইনজীবী নিয়োগ করেছিল, তিনি ফিফাকে বাংলাদেশে পরিবর্তন ও আবাহনীর পরিস্থিতি সম্পর্কে জানিয়েছিলেন। কিন্তু ফিফা খেলোয়াড়দের পক্ষে রায় দিয়েছে। যদিও তারা কেউ বাংলাদেশে আসেনি, এবং এক-দুজন একই মৌসুমে অন্য ক্লাবে খেলেছেও।’
এসব ক্ষেত্রে ফিফা বরাবরই ফুটবলারদের পক্ষে কাজ করে থাকে। ফুটবলের সবচেয়ে বড় অংশীজন যে ফুটবলাররাই। তিন মৌসুম আগে ইরানের মাইসেম শাহ জাদেহকে দলে ভিড়িয়েছিল মোহামেডান। পাওনা রেখেছে ৭৩ লাখ টাকারও বেশি। মোহামেডানের ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব বলেন, ‘বিষয়টি সমাধান করতে আমাদের ম্যানেজমেন্ট কাজ করছে।’
খেলোয়াড় নিবন্ধনে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। মৌসুমের শুরুতে ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাব দল সাজানো নিয়ে বেশ ঝামেলায় পড়তে। ওই খেলোয়াড়ের পুরো অর্থ পরিশোধ করে শেষ মুহূর্তে লিগে নাম লেখাতে পারে তারা।
বসুন্ধরা, আবাহনী ও মোহামেডানকেও এখন তা-ই করতে হবে। নয়তো আগামী তিন দলবদলে খেলোয়াড় নিবন্ধন করতে পারবে না তারা। এভাবে একের পর এক নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়ে জাতীয় দলেও। সাবেক ফুটবলার জাহিদ হাসান এমিলি যেমন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকের অবস্থা খুবই খারাপ। ঘরোয়া ফুটবলে যত দিন পর্যন্ত খেলোয়াড়েরা সন্তুষ্টি বা পারিশ্রমিকের নিরাপত্তা না পাবে তত দিন পর্যন্ত জাতীয় দল কিন্তু ব্যর্থ হতেই থাকবে। আপনার ক্লাব ফুটবল চলে ১০ মাস। মাঝে মাঝে আপনি কিছু আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন।’