পাকিস্তান ক্রিকেট দলের নামের সঙ্গে আগেই জুড়ে গেছে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ তকমা। শুধু দলই নয়। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডও (পিসিবি) যথেষ্ট আনপ্রেডিক্টেবল। রাওয়ালপিন্ডিতে যখন চলছে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুয়েকে নিয়ে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ, সেই মুহূর্তে বোর্ডের ওপর বাড়ছে চাপ।
পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) মুলতান সুলতানসের সত্ত্বাধিকারী আলী খান তারিন গত মাসে বোর্ডের কাছ থেকে আইনি নোটিশ পাওয়ার পর থেকেই ক্ষুব্ধ । প্রায় এক মাস ধরে চলছে দুই পক্ষের লড়াই। সহজে যখন সমস্যার সমাধান হচ্ছে না, তখন বোর্ডের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের হুমকি দিলেন তারিন। মুলতানের সত্ত্বাধিকারীর গতকাল বিকেলে হুমকির কয়েক ঘণ্টা পরই পিসিবি থেকে পদত্যাগ করেছেন আজহার আলী। পিসিবির নির্বাচকের পাশাপাশি আজহার বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট কমিটির প্রধানের দায়িত্বও পালন করতেন।
বরাবরের মতো পিএসএলের মান নিয়ে সরাসরি সমালোচনা করেছেন মুলতান সুলতানসের মালিক তারিন। বোর্ডের কালো তালিকাভুক্ত তারিন হতে পারেন বলে পাকিস্তানি গণমাধ্যম গত মাসে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছিল। এক মাস পর মুলতানের সত্ত্বাধিকারী বোর্ডকে কড়া হুঁশিয়ারি করেছেন। তারিন গতকাল নিজের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘পিসিবি যেহেতু আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে না, আমরা কী করতে পারি সেটার একটা আপডেট দিচ্ছি। গত মাসে আমরা পিএসএল ম্যানেজমেন্টকে একাধিক ইমেইল পাঠিয়েছি। আমাদের দলের মূল্যায়ন, চুক্তি পুনঃনবায়নের প্রসঙ্গ তুলেছিলাম। কিন্তু কোনো সাড়া পেলাম না। আমাদের আইনি চিঠি, মেইল, চেয়ারম্যানের কাছে আমার পাঠানো চিঠি—কোনো কিছুরই উত্তর পেলাম না।’
পাকিস্তানি গণমাধ্যমের গত মাসের প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছিল, মুলতানের ১০ বছরের চুক্তি বাতিল হতে পারে। পরবর্তীতে চুক্তি পুনরায় নবায়নের ব্যাপারে আর কোনো আলোচনা যখন হয়নি, তখন তারিন আর চুপ করে বসে থাকেননি। মুলতানের সত্ত্বাধিকারী এক্সে লিখেছেন, ‘মুলতানের চুক্তি পুনরায় নবায়নের ব্যাপারে অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রতিনিধিরা যখন জিজ্ঞেস করছিলেন, তখনো কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। সবারই যখন প্রশ্ন কেন এটা রুদ্ধদ্বার বৈঠকের মাধ্যমে সমাধান করা গেল না, এটার উত্তর খুবই সহজ। পিএসএল ম্যানেজমেন্ট তাদের সঙ্গে আমাদের যুক্ত করতে চাচ্ছে না। যদি এমন ভূতুড়ে অবস্থা চলতে থাকে, তখন আইনি পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। যা হতে যাচ্ছে, পুরোপুরি অপ্রয়োজনীয়। এই সমস্যার সমাধান চা-বিস্কুট খেয়ে আলোচনা করে করা যেত। কিন্তু একগুঁয়েমি আচরণের কারণে সহজ জিনিসটা কঠিন হয়ে গেল। শুভবুদ্ধির উদয় হবে আশা করি।’
এদিকে স্বয়ং আজহার কিংবা পিসিবির পক্ষ থেকে তাঁর (আজহার) পদত্যাগের ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি। নির্বাচক ও যুব উন্নয়ন বিভাগের প্রধানের পদে ১ বছর থাকার পর আজহার পদত্যাগ করেছেন বলে ক্রিকইনফো গতকাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। পিসিবির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আজহারের বনিবনা হচ্ছিল না। পাকিস্তান শাহিনস ও অনূর্ধ্ব-১৯ দলের প্রধান হিসেবে সরফরাজ আহমেদকে পিসিবি নিয়োগ দেওয়ার পর বোর্ডের সঙ্গে আজহারের দ্বন্দ্ব আরও বাড়ছিল। সরফরাজের নিয়োগের কারণে আজহারের দায়িত্ব ও তাঁর (সরফরাজ) কাজ একই হয়ে যায় বলে ক্রিকইনফো এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে। হয়তোবা এ কারণেই আজহার সরে দাঁড়িয়েছেন।
বোর্ডের চলমান সমস্যার মধ্যে পাকিস্তান অবশ্য দুর্দান্ত খেলছে। শ্রীলঙ্কাকে কদিন আগে ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই করেছে পাকিস্তান। এই সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রেকর্ড গড়া এক সেঞ্চুরি করেন বাবর আজম। পরশু ত্রিদেশীয় সিরিজে জিম্বাবুয়েকে ৫ উইকেটে হারিয়েছিল পাকিস্তান।