প্রতিপক্ষ দল ব্যাটিংয়ে নামলে গড়ে রানের বন্যা বইয়ে দেয়। অথচ নিজেরা ব্যাটিংয়ে নামলে স্কোর ১০০ পেরোয় কি না, সেটা নিয়েই তৈরি হয় শঙ্কা। বলা হচ্ছে এখানে বাংলাদেশের কথা। ওয়ানডেতে জেতা তো দূরে থাক, পুরো ৫০ ওভার ব্যাটিং করাও যেন এখন তাদের জন্য অনেক কঠিন কাজ।
আফগানিস্তানের কাছে প্রথম দুই ওয়ানডেতে হারে সিরিজ আগেই খুইয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ। আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে গতকাল তৃতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ নেমেছে ধবলধোলাই এড়ানোর মিশনে। ২৯৪ রানের লক্ষ্যে নেমে ১৮.৪ ওভারে ৩ উইকেটে ৭০ রান ছিল বাংলাদেশের স্কোর। এমন অবস্থা থেকে ম্যাচ জেতা কঠিন হলেও একেবারে অসম্ভব তো নয়। কিন্তু এখান থেকেই ২৩ রানে শেষ ৭ উইকেট হারিয়ে ৯৩ রানে গুটিয়ে যায় মিরাজের দল। ইনিংস সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেন সাইফ হাসান। অন্যদের স্কোর মোবাইল নম্বরের ডিজিটের মতো।
আবুধাবিতে গত রাতে তৃতীয় ওয়ানডেতে ২০০ রানে হেরে ৩-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই হয়েছে বাংলাদেশ। বড় ব্যবধানে হারে নির্দিষ্ট কাউকে নয়, বরং পুরো দল হিসেবেই দায়টা নিচ্ছেন মিরাজ। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘সবাই কাজ করছে। ইচ্ছা করে কেউ খারাপ খেলে না। সবাই চেষ্টা করে; অনেক সময় অনেক কিছু পক্ষে আসে না। একসঙ্গেই সবাই খারাপ খেলছে। ভালো খেলতে খেলতে আউট হয়ে যাচ্ছে। ৩০-৩৫ রান করে আউট হচ্ছি। ব্যাটাররা এভাবে আউট হলে দলের জন্য কঠিন।’
টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে গতকাল তৃতীয় ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের স্কোর ৪৮ ওভারে ছিল ৯ উইকেটে ২৪৯ রান। আফগানদের স্কোর বড়জোর ২৬০-২৭০ হতে পারত। কিন্তু শেষ দুই ওভারে ৪৪ রান নিয়ে ৫০ ওভার হাশমাতউল্লাহ শাহিদীর আফগানিস্তান শেষ করেছে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৯৩ রানে। সাত নম্বরে নেমে মোহাম্মদ নবি ৩৭ বলে চারটি চার ও পাঁচটি ছক্কায় ৬২ রান করে অপরাজিত থাকেন। ওপেনিংয়ে ইবরাহিম জাদরান করেছেন ৯৫ রান। ব্যাটিংয়ে নেমে ইবরাহিমের সমান রানই তো বাংলাদেশ করতে পারেনি।
হুড়মুড়িয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিংলাইন ধসে পড়া বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। আবুধাবিতে ১১ অক্টোবর আফগানিস্তানের দেওয়া ১৯১ রানের লক্ষ্যে নেমে মিরাজের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু ১০ রানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে ১০৯ রানে গুটিয়ে যায় দলটি। সর্বশেষ ১২ ওয়ানডের মধ্যে ১০টিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। টানা চারটি ওয়ানডে সিরিজ হেরেছে দলটি। ৭৪ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের ১০ নম্বরে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। মিরাজের মতে ভুলের পুনরাবৃত্তি যত কম হবে, ততই ভালো দলের জন্য। তৃতীয় ওয়ানডেতে ২০০ রানে হারের পর সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমরা আসলে এত বাজে দলও না যতটা খারাপ খেলছি। যদি উন্নতি না করতে পারি, তাহলে আরও কঠিন হবে। ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি হতে থাকলে আমাদের জন্য আরও কঠিন হবে।’
ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে মিরাজের রেকর্ড সুখকর নয়। তাঁর নেতৃত্বে ১০ ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ জিতেছে শুধু একটিতে। ১৮ অক্টোবর মিরপুরে শুরু হবে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডে হবে ২১ ও ২৩ অক্টোবর। সব ম্যাচই হবে মিরপুরে।
ওয়ানডেতে এই নিয়ে ছয়বার ২০০ বা তার বেশি রানে হেরেছে বাংলাদেশ। নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৩৩ রানে বাংলাদেশ হেরেছে পাকিস্তানের কাছে ২০০০ সালের ২ জুন। ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপে মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ২০৬ রানে হারের বিব্রতকর কীর্তি রয়েছে বাংলাদেশের। প্রোটিয়াদের কাছে এশিয়া মহাদেশের এই দলটি ২০১৭ সালে ২০০ রানে হেরেছে। ভারতের কাছেও দুবার ওয়ানডেতে ২০০ বা তার বেশি রানে হেরেছে বাংলাদেশ।