মাউন্ট মঙ্গানুইতে নতুন ইতিহাস লিখল বাংলাদেশ। আগের ৩২ বারের চেষ্টায় যা পারেনি, আজ সেটিই করে দেখাল মুমিনুল হকের দল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই টেস্ট জয়ে তাদের মাঠে যেকোনো সংস্করণে প্রথম জয় পেল বাংলাদেশ।
চালকের আসনে থাকা বাংলাদেশ পঞ্চম দিনের শেষটাও দুর্দান্তভাবে করেছে। যার নেতৃত্ব দিয়েছেন ইবাদত হোসেন ও তাসকিন আহমেদ। সাধারণত এমন পরিস্থিতিতে এর আগে অনেকবার খেই হারিয়েছে বাংলাদেশ।
২০০৩ সালে মুলতান কিংবা ২০০৬ সালে ফতুল্লায় হৃদয়ভাঙার গল্পটা বয়ে নিয়ে বেড়াতে হয়েছে দীর্ঘ দিন। অবশেষে তাসমান পাড়ের দেশ নিউজিল্যান্ডের মাউন্ট মঙ্গানুইতে এসে সেই দায় মেটাল বাংলাদেশ।
হোয়াংহো নদী যদি হয় চীনের দুঃখ হয়, তাহলে বাংলাদেশের টেস্ট-দুঃখ মুলতান। ২০০৩ সালের সেই টেস্টে জয়ের মতো একটা পরিস্থিতি তৈরি করেও পাকিস্তানের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। আরও নির্দিষ্ট করে বললে ইনজামাম-উল-হকের কাছে। সাবেক এই পাকিস্তানি অধিনায়কের ক্যারিয়ার বাঁচানো অপরাজিত ১২৪ রানের ইনিংসে তীরে এসে তরী ডুবেছিল বাংলাদেশের। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর সবচেয়ে বড় ধাক্কা ছিল মুলতানের ওই হার। এই দুঃসহ স্মৃতি গত ১৮ বছর বয়ে বেরিয়েছে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই জয়ে সেই ক্ষতে হয়তো কিছুটা প্রলেপ দেওয়া যেতে পারে। এই জয়ের মাহাত্ম্য যে একটু আলাদা। এমনকি প্রশ্নাতীতভাবে বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সাফল্য। কারণ, বাংলাদেশ যে জিতেছে টেস্ট বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদেরই ডেরায়।
শুধু মুলতান কেন, পঞ্চম দিনের জয়ের সুবাস পেয়েও টেস্ট হারের আরেকটি ভয়ংকর দুঃস্মৃতি আছে বাংলাদেশের। সেটিও দেড় দশক আগে। মুলতান টেস্টের ২ বছর পর ঘরের মাঠ ফতুল্লায় মহাপরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়াকে হাতের নাগালে পেয়েছিল বাংলাদেশ। একটু এদিক-ওদিক হলে যে গল্পটা হতে পারত বাংলাদেশের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। আগেরবারের মতো সেবারও হৃদয় ভেঙেছিল বাংলাদেশের। মুলতান টেস্টে ইনজামামের ভূমিকায় সেদিন ছিলেন রিকি পন্টিং। চতুর্থ ইনিংসে ১১৮ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে দলকে উদ্ধার করেছিলেন পন্টিং।
ঘরের মাঠে টেস্টে সর্বশেষ তিন বছরে ধারাবাহিকতার প্রতিমূর্তি ট্রেন্ট বোল্ট-টিম সাউদিরা। অন্যদিকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে ধুঁকছিল বাংলাদেশ দল। মাঠ কিংবা মাঠের বাইরে নেতিবাচক খবর আর বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছিল না। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় ঘুরে দাঁড়ানো ছাড়া বিকল্প পথ ছিল না মুশফিক-মুমিনুলদের।
মাউন্ট মঙ্গানুইয়েই ব্যর্থ টপ অর্ডার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ‘নখদন্তহীন’ ইবাদত এই টেস্টে নিজেদের চিনিয়েছেন একটু আলাদাভাবে। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৬ রান দিয়ে ৬ উইকেট নিয়ে এই ম্যাচের নায়কও বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ২৭ বছর বয়সী সৈনিক।
প্রতিটি উইকেট শিকারের পর ইবাদত যেভাবে স্যালুট দেন, দেশবাসীর পক্ষ থেকে সেই স্যালুট এবার তাঁরই প্রাপ্য।