এ মুহূর্তে সাকিব আল হাসান খেলছেন আরব আমিরাতের আইএল টি-টোয়েন্টিতে। প্লে-অফে ওঠা এমআই এমিরেটসের হয়ে তাঁর পারফরম্যান্স যথেষ্ট উজ্জ্বল। ফোনে দুবাই থেকে আজকের পত্রিকাকে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে সাকিবের বর্তমান জীবনটা যেন উঠে এল। আজ থাকছে প্রথম পর্ব। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রানা আব্বাস।
প্রশ্ন: আইএল টি-টোয়েন্টিতে ধারাবাহিক পারফর্ম করছেন। মনে হচ্ছে, ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে তৈরি হচ্ছেন! ভাবনায় আদৌ জাতীয় দল আছে, নাকি শুধুই নিজের খেলার জন্য?
সাকিব আল হাসান: নিজের খেলার জন্যই। এগুলো নিয়ে আসলে এত চিন্তা করি না যে পরে কী আছে। এখন এটা খেলার সুযোগ আছে, চেষ্টা করছি যতটুকু সম্ভব ভালো করা যায়।
প্রশ্ন: দেশে বিপিএল চলছে। যদি বিপিএলে খেলার সুযোগ থাকত, আইএলে খেলতেন?
সাকিব: আইএল পুরোটা খেলতাম। তারপর যদি বিপিএলে খেলার সুযোগ থাকত, তাহলে খেলতাম।
প্রশ্ন: আপনি একবার বলিউডের ‘নায়ক’ সিনেমার উদাহরণ দিয়ে বলেছিলেন, বিপিএলের সিইও হলে দুই মাসে সব বদলে দিতেন! বিপিএলের মান আদৌ বাড়ছে, নাকি শুধুই কমছে?
সাকিব: দূর থেকে আমার পক্ষে এ নিয়ে মন্তব্য করা মুশকিল। মান কোন অবস্থায় আছে—ভালো না খারাপ; এটা আমার চেয়ে আপনারা ভালো বিচার করতে পারবেন। মাঠেরটা খেলোয়াড়েরা বুঝবে যে মান বাড়ল না কমল। আর মাঠের বাইরের বিষয় আপনারা আরেকটু ভালো দেখতে পারবেন।
প্রশ্ন: গত দেড় বছরে দেশের ক্রিকেট প্রশাসনে অনেক পরিবর্তন দেখা গেছে। সর্বশেষ বিসিবি নির্বাচন নিয়ে অনেক বিতর্ক, হইচই হলো। এক পক্ষ বলছে, অবৈধ বোর্ড! ক্লাব ক্রিকেটে খেলোয়াড়েরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। একজন ক্রিকেটার হিসেবে এখানে সঠিক সমাধান কী মনে করেন?
সাকিব: আমার পক্ষে আসলে বলা মুশকিল। দূর থেকে পুরো ছবি দেখতে পাওয়া মুশকিল। দ্বিতীয়ত, কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা; অনলাইনে সেটাও বোঝা মুশকিল। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমি এগুলো ফলোই করিনি বলতে গেলে। এ কারণে আমার জন্য খুব কঠিন কোনো মন্তব্য করা। দেখিনি কে কী করছে। আর এত অল্প সময় কাউকে বিচারও করা যায় না। কমেন্টস করার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে মনে হয় না।
প্রশ্ন: ২০২৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আমাকে দেওয়া একটা সাক্ষাৎকারে আপনি বলেছিলেন, যদি বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে ক্রীড়ামন্ত্রী হতে চান, নাকি বিসিবির সভাপতি। বলেছিলেন বিসিবির সভাপতি হতে চান। তার মানে, ক্রিকেট প্রশাসনে আপনার একটা আগ্রহ ছিল।
সাকিব: না, প্রেসিডেন্ট হতে চাই মানে, যদি অপশন দুইটা থাকে, মনে হয় বিসিবির প্রেসিডেন্ট ভালো অপশন ক্রীড়ামন্ত্রীর চেয়ে। ইন্টারেস্ট আছে বলাটা ঠিক হবে না। মানে, আমার যদি ওরকম অপশন থাকে, তাহলে সেটা। তবে আমার ওরকম কোনো ইচ্ছা যে আছে, তা নয়। ক্রিকেটের সঙ্গে থাকতে হবে, এ রকম কোনো আগ্রহ নেই। ভবিষ্যৎ আমরা জানি না কেউই। এটা বলা মুশকিল যে কোনো দিনও কোনো কিছু হব কি না। যদি বলেন যে আমার আগ্রহ আছে কি না, পারসোনালি না, খুব একটা নেই।
প্রশ্ন: ক্রিকেট ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে দেওয়ার দাবি অনেকবার শুনেছি। বর্তমান বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ক্রিকেট বিকেন্দ্রীকরণের যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছেন, ঠিকঠাক বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা কতটা দেখছেন?
সাকিব: আমি তো জানি না, আসলে কী পদক্ষেপ নিয়েছে। যদি ভালো পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন, তাহলে ভালো অবশ্যই। চাওয়া আর বাস্তবায়ন করার মধ্যে পার্থক্য আছে। যদি চাওয়া-পাওয়ার মিল থাকে, তাহলে সেটা অবশ্যই ভালো।
প্রশ্ন: আপনার দেশে ফেরা প্রসঙ্গে ক্রিকেট বোর্ডের নীতিনির্ধারকদের যতবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, সবাই বিষয়টি সরকার বা রাষ্ট্রের ওপরে ছেড়ে দেন। সামনে জাতীয় নির্বাচন, যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে, আপনার কি মনে হয় ফেরা সম্ভব হতে পারে? কিংবা আশা দেখেন?
সাকিব: এখানে রাষ্ট্র, সরকার—এগুলো আসা মানেই তো ক্রিকেট বোর্ডও ফেয়ার নেই। এখানে সরকারের হস্তক্ষেপ আছে। এগুলো তো বোঝাই যায়। আপনাদের আসলে প্রশ্নগুলো করা উচিত ঠিক জায়গায়, ঠিকভাবে। ভয় না পেয়ে! আপনারাও ওই ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে প্রশ্ন করেন দেখে তারা ওই ঘুরিয়ে উত্তর দিতে পারে। এ প্রশ্ন আমাকে তো করার বিষয় নয়। জিজ্ঞেস করবেন সরকারকে। সরকার আর ক্রিকেট বোর্ডের মুখোমুখি হয়ে। কথা হচ্ছে ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পর্কই থাকার কথা নয়। আর ক্রিকেট বোর্ড যদি সরকারের ওপর চাপিয়ে দেয়, এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারের হস্তক্ষেপ আছে। এর অর্থ হলো, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত। তাদের সঙ্গে সঙ্গে সাসপেন্ড হয়ে যাওয়া উচিত (হাসি)! আসলে ওই সাবজেক্টেই যাওয়া উচিত নয়। আমাকে যদি ক্রিকেট বোর্ড ফেরত না নিতে পারে (দেশে), এটা তাদের ব্যর্থতা। ঠিক না? আমার কী করার আছে এখানে?
প্রশ্ন: আপনি যেটা করতে পারেন—নিয়মিত নিজেকে ফিট আর ভালো পারফর্ম করে যেতে পারেন, তাই তো?
সাকিব: না, না; আমি কাউকে দেখাতে কিছু করছি না। আমার এমনও খুব একটা শখ নেই যে জাতীয় দলে খেলতেই হবে। আমি আমার ক্রিকেটটা পছন্দ করি। ক্রিকেটটাই খেলে যাচ্ছি।
প্রশ্ন: পুরোনো প্রসঙ্গটা একটু বিস্তারিত শুনতে চাই। ২০২৪ সালের অক্টোবরে বিসিবি আপনাকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানাতে চেয়েছিল। দুবাই পর্যন্ত এলেন, সেখান থেকে ফিরে গেলেন। ওই সময় আসলে কী ঘটেছিল?
সাকিব: আমাকে সরাসরি ক্রীড়া উপদেষ্টা ও আইন উপদেষ্টা গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছিলেন। আমি প্লেনে উঠেছি। বিসিবি থেকে আমাকে পুরো নিশ্চিত করা হয়েছে। (যুক্তরাষ্ট্র থেকে) তারপর আমি প্লেনে উঠেছি। দুবাইয়ে নামার পর তাদের সব জায়গা থেকে আবার বলছে, না, তাদের নাকি ১২ ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতির অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। যদি না আসি, তাহলে ভালো হয়। আমি আর যাইনি।
প্রশ্ন: সরকারের তরফ থেকে তাহলে আপনাকে আসার পূর্ণ সবুজসংকেতই দেওয়া হয়েছিল?
সাকিব: সরকারের সব তরফ থেকে; মানে, বললামই তো আইন উপদেষ্টা ও ক্রীড়া উপদেষ্টা—দুজন গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছিলেন দেখেই তো আমি রওনা দিয়েছি, আর ক্রিকেট বোর্ড নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।
(চলবে)