বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিলে আওয়ামী লীগ বাধা দেবে না বলে জানিয়েছেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। তবে আন্দোলনের নামে সহিংসতা কিংবা হেফাজত ইসলামের মতো তাণ্ডব করলে ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতকে যেভাবে দমন করা হয়েছে, বিএনপিকে সেভাবে দমন করা হবে।
শুক্রবার বিকেলে গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের রুদ্ধদার সভায় এমন বার্তা দেন দলটির সভাপতি। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা আজকের পত্রিকাকে এ কথা জানান।
উপস্থিত নেতারা বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনা জানিয়ে দেন, ওই নির্বাচনে শেখ হাসিনা পাস করাবেন এই ধারণা নিয়ে বসে থাকলে হবে না। এবারের নির্বাচনে সবাইকে নিজের যোগ্যতায় জিতে আসতে হবে। দলীয় এমপিদের এলাকায় কার কী অবস্থা, তা জানতে জরিপ চলছে জানিয়ে দলীয় সভাপতি বলেন, এমপিরা কর্মগুণে মনোনয়ন পাবেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে আসা এমপিরা নির্বাচন কী তা বোঝেন না, তাদের বুঝতে হবে।
জানা গেছে, সভায় দলটির সম্মেলনের তারিখ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে প্রথমে ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর সম্মেলনের তারিখের বিষয়ে কথা হয়। বৈশ্বিক বিবেচনা করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ এক দিনে সম্মেলন শেষ করার প্রস্তাব করেন। তখন কয়েক নেতা এর সমর্থন করেন। পরে ২৪ ডিসেম্বর সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত করা হয় বলে জানা গেছে। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ কয়েকজন জাঁকজমকপূর্ণ সম্মেলন করার কথা বলেন। এ সময় দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সবাইকে কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলি, আমরা জাঁকজমকপূর্ণ সম্মেলন করলে সমালোচনা হবে।
ঢাকায় যানজট এড়ানোর জন্য ছুটির দিনে সম্মেলনের তারিখ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সম্মেলনের আগে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলটির জাতীয় কমিটির বৈঠক করা হবে বলে জানানো হয়। সেখানে দলের সম্মেলনের বাজেট তৈরি করা হবে বলেও জানিয়েছেন উপস্থিত আওয়ামী লীগের নেতারা।
বিশ্বব্যাপী আসন্ন খাদ্যসংকট মোকাবিলায় কৃষি খাতের সঙ্গে সম্পর্কিতদের পাশাপাশি দলের নেতা-কর্মীরা যেন সাধারণ মানুষকে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে উৎসাহিত করেন, সে বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। আসছে ডিসেম্বরে বিজয়ের মাসে প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যন্ত বিজয় শোভাযাত্রা আয়োজনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সভায় সাংগঠনিক সম্পাদকেরা বিভিন্ন জেলার সম্মেলনের অগ্রগতি তুলে ধরেন। এ সময় একজন সাংগঠনিক সম্পাদক তিনটি জটিল জেলার নাম বলেন এবং দলীয় সভাপতির হস্তক্ষেপ ছাড়া সেই জেলাগুলোতে সম্মেলন করা সম্ভব নয় বলে জানান ওই সাংগঠনিক সম্পাদক। তখন বিষয়টি দেখবেন বলে জানান দলের সভাপতি।
এ সময় সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিককে উদ্দেশ্যে করে শেখ হাসিনা বলেন, যাঁদের সাংগঠনিক সম্পাদক বানিয়েছি, তাঁদের মনে রাখতে হবে যে জেলা-উপজেলার ত্যাগী নেতারা কিন্তু বয়সেও আপনাদের চেয়ে বড়। কোনো সাংগঠনিক সম্পাদক যেন জেলা পর্যায়ের ত্যাগী নেতাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ না করেন। এখন অনেকের চেহারা চকচক করে। অসময়ের নেতাদের দাপট না থাকতে পারে, কিন্তু বিপদে তারাই পাশে থাকে। লালমনিরহাট জেলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সেখানে ত্যাগী নেতা নুরুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলে কমিটি দিয়ে আসবেন।
মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সঙ্গে সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণে আগামী রোববার দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে বৈঠক করতে বলা হয়েছে বলে জানা গেছে।