আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের আর প্রাসঙ্গিকতা আছে কিনা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি জোটনেত্রী শেখ হাসিনার কাছে জানতে চেয়েছেন শরিক দলের নেতারা। জবাবে জোট নেত্রী বলেছেন, প্রাসঙ্গিকতা আছে বলেই তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন। শরিকেরা অবমূল্যায়নের অভিযোগও তুলেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) গণভবনে অনুষ্ঠিত ১৪ দলের জোটের বৈঠকে এই আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছে।
গণভবনে বৈঠকের আগে অনানুষ্ঠানিকভাবে জোটের শরিক দলের কয়েকজন নেতা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন বলেও জানা গেছে। তাঁরা জোটের প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ধারণা পাওয়া এবং ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে কথা বলার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ না থাকলেও তাঁরা জোটের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি পালন করবেন।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র আজকের পত্রিকাকে জানায়, বৈঠকে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারিসহ নেতারা নিজেদের ক্ষোভের কথা জানান। জাতীয় নির্বাচনের আগে জোটের দলগুলোর কর্মী-সমর্থক নেই আওয়ামী লীগের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করেন। তাঁরা বলেন, জোট করা হয়েছে আদর্শের ভিত্তিতে, কার কী ভোট আছে সেটি দেখে নয়। যদি তাই হয় তাহলে কক্সবাজার-১ আসন থেকে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিমকে কোন ক্রাইটেরিয়ায় সমর্থন দেওয়া হয়েছে। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে তাঁকে কক্সবাজারের এমপি বানানো হয়েছে। ওই এলাকায় তাঁরতো কর্মী সমর্থকও নেই।
বৈঠকের একপর্যায়ে আন্তর্জাতিক চাপসহ নিষেধাজ্ঞার হুমকির বিষয়টি আসে। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা নিষেধাজ্ঞা দেবে তাঁদের সঙ্গে কোনো ব্যবসা করবে না বাংলাদেশ।
শুরুতে রাশেদ খান মেনন বক্তৃতা করেন এবং তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে যে জোট হয়েছিল তা এখন ম্রিয়মাণ। কীভাবে তা কার্যকর করা হবে তা ঠিক করতে হবে। দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তিও বেড়েছে।
নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি জামায়াতে ইসলামির বিরুদ্ধে কীভাবে মামলা করেছেন এবং অতীতে তাঁর দলের নানা অবদানের কথা তুলে ধরেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব এই অবদান ভুলে গেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এ ছাড়া গত জাতীয় নির্বাচনে কিংস পার্টির উত্থান নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন তিনি।
নজিবুল বশর বলেন, ‘কিংস পার্টিকে তুলে এনেছেন, আমাকে এইভাবে অপমান না করলেও পারতেন। ২০১৪ সালে যখন আপনার সঙ্গে কেউ ছিল না, আমি প্রথম সমর্থনের কথা প্রথমে বলেছিলাম। তখন আপনি (প্রধানমন্ত্রী) আমার হাত ধরে বলেছিলেন কখনো ভুলবেন না, কিন্তু ভুলে গেছেন। আমরা আপনার সঙ্গে আছি, থাকব। তবে অপমান করবেন না। আপনার সম্মান যেমন আছে, আমাদেরও সম্মান আছে।’
নেতারা বলেন, ‘আমাদের ভোট নিয়ে কথা বলেন। আমরা রাজনৈতিকভাবে আপনার সঙ্গে ঐকমত্য হয়েছি। আমাদের কী ভোট আছে এটা দেখার কথা ছিল না। আজকে এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কেন?’
দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘আপনিতো জেনারেল ইবরাহিমকে তুলে নিয়ে এসেছেন। আপনি আমাদের ভোটের কথা বলেন, ওর কি ভোট আছে? ওর ভোট হাটহাজারি, চকরিয়ার (কক্সবাজার-১) ভোটারও না। উনি এমপি হলে কীভাবে? আমাদের সংগঠনের বিষয়ে প্রশ্ন এল কেন?’
হাসানুল হক ইনু আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ১৪ দলের শরিকদের অবজ্ঞা করার অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, এক/এগারোর সময় আওয়ামী লীগের অনেকেই শেখ হাসিনার পাশে ছিলেন না। কিন্তু ১৪ দলের শরিকেরা ছিল।
বৈঠক শেষে রাশেদ খান মেনন সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতারা দাঁড়িয়ে তাঁরা তাঁকে হারানোর ব্যবস্থা করেছে, মাইজভান্ডারির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এই সব ক্ষেত্রে ১৪ দলের নেতাদের যদি পাশে না নেন তাহলে আমাদের ঐক্যবদ্ধতা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। কিন্তু শেখ হাসিনা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম এবং ঐক্যবদ্ধ থেকেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।’
সূত্র জানায়, বৈঠকে ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু আওয়ামী লীগকে দোষারোপ না করে শরিকদের নিজ নিজ শক্তি বাড়ানোর তাগিদ দেন। তিনি বলেন, শরিকেরা শক্তিশালী হলে জোটের শক্তি বাড়বে।
বৈঠক শেষে গণভবনের গেটে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, জোটের স্ব স্ব দলকে আরও সংগঠিত এবং জনগণের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে ১৪ দলের নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এ বৈঠকের পর ১৪ দলের মধ্যে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে সেটা থাকবে না বলে জানান ওবায়দুল কাদের।