ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে দেশের আট বিভাগীয় শহরে একযোগে অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে ইনকিলাব মঞ্চ। আজ বেলা ২টা থেকে এই অবরোধ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।
ইনকিলাব মঞ্চ জানিয়েছে, আজ রোববার ডিএমপি কমিশনারের সংবাদ সম্মেলন পর্যালোচনার পর বেলা ২টা থেকে ঢাকাসহ আট বিভাগে অবরোধ কর্মসূচি চলবে।
মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের গতকাল শনিবার রাতে বলেন, ‘ওসমান হাদির খুনিদের জনতার সামনে না আনা পর্যন্ত, আমাদের কর্মসূচি চলবে। আমরা আন্দোলন ছোট করব না, আন্দোলন আরও বড় করব।’
শনিবার রাতে শাহবাগে বিক্ষোভকারীদের সামনে উপস্থিত হয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে হাদি হত্যার বিচার সম্পন্ন করার আশ্বাস দেন তথ্য ও সম্প্রচার এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ‘শহীদ হাদির হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সবাইকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তদন্তের চূড়ান্ত ধাপ প্রায় শেষের পথে। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করে নির্ভুল ও শক্ত প্রমাণভিত্তিক চার্জশিট দাখিল করা হবে ৭ জানুয়ারির পর।’
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা আরও বলেন, ‘আমি হাদিকে আমার ভাই মনে করতাম, এখনো করি। দেশের তাঁকে আরও অনেক দিন প্রয়োজন ছিল। যেই লোকের মৃত্যুতে ১২ থেকে ১৫ লাখ মানুষ জানাজা পড়ে, সেই মানুষের মৃত্যুর বিচার আসলে একটা জাতীয় কর্তব্য।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার হয়তো আপনাদের মতো এখানে বসে নেই। কিন্তু সরকার আমাদের শহীদ হাদিকে যারা খুন করেছে, সে সমস্ত চিহ্নিত খুনির পেছনে যারা ছিল, সকলকে চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।’
শিশু আছিয়া হত্যার বিচারের প্রসঙ্গ তুলে সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, ‘আছিয়ার ঘটনায় ছয় কার্যদিবসের মধ্যে বিচারকার্য সম্পন্ন করা গিয়েছিল। কাজেই চার্জশিটটা যাতে আমরা নির্ভুলভাবে দিতে পারি, নিখুঁতভাবে দিতে পারি। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে যাতে কোথাও কোনো ফাঁকফোকর না থাকে। সেটা সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পর আমাদের ৭ জানুয়ারির পরে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার আমরা অবশ্যই করে যাব।’
উপদেষ্টা রিজওয়ানা আরও বলেন, ‘অপরাধী যদি পালিয়েও থাকে, তারপরেও আমাদের সর্বান্তঃকরণ চেষ্টা আছে, তাদেরকে যেন আমরা অবশ্যই দেশে ফিরিয়ে আনতে পারি।’
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই হাদি হত্যার বিচারের আশ্বাস দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা অবশ্যই এই বাংলাদেশের মাটিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার থাকাকালীন আমাদের হাদিকে যারা মেরে ফেলল, তাদের বিচার সম্পন্ন করে যাব।’
এ সময় ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ‘শরিফ ওসমান হাদি হত্যার তদন্ত চলছে। সরকার পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ সব গোয়েন্দা বাহিনীকে এই ঘটনার পেছনে কারা আছে, তা উদ্ঘাটনের জন্য নিয়োগ করেছে। ইতিমধ্যে এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন এবং তদন্তের যথেষ্ট অগ্রগতি আছে। তদন্তের স্বার্থে আমি সব বিষয় এখানে বলাটা ঠিক হবে না। তাহলে প্রতিপক্ষ আমাদের রহস্যগুলো জেনে নেবে। তাই যতটুকু সম্ভব তদন্তের যে অংশটুকু বলা যায়, আমি সেগুলো আপনাদের কাছে এখন বলছি। মামলার তদন্ত চলাকালে এযাবৎ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘আমরা আশা করছি আগামী ১০ দিনের মধ্যে, অর্থাৎ ৭ জানুয়ারির মধ্যে এই মামলার চার্জশিট দেব। এই মামলা-সংক্রান্ত আমার কাছে যে তথ্য আছে, আপনাদের দিলাম। তদন্তের যতটুকু প্রকাশ করা যায়, ততটুকুই বললাম। আগামীকাল (রোববার) আরও বিস্তারিতভাবে আপনাদের আমার মিডিয়া সেন্টার থেকে বলবেন। আপনারা নিশ্চয় আমার কথা বুঝতে পেরেছেন, সবাই ধৈর্য ধারণ করুন। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য, আরও যারা পেছনে আছে, সবার নাম এবং ঠিকানা উন্মোচন করে দেব।’
তথ্য উপদেষ্টা ও ডিএমপি কমিশনারের আশ্বাসের পর শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে শাহবাগ ছেড়ে যান বিক্ষোভকারীরা। আজ রোববার বেলা ২টা থেকে তাঁরা আবারও সেখানে অবস্থান নেবেন বলে জানিয়েছেন।